• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার ১১ মাসে ১১ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে


সোনালীনিউজ ডেস্ক ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ১২:৪৮ পিএম
সরকার ১১ মাসে ১১ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে

ঢাকা: এ বছর ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মত আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে ১১ মাস অতিক্রম করলো। আগামী বছর সরকারের বর্ষপূর্তি হবে। কিন্তু বর্ষপূর্তির আগেই সরকারের অনেক ক্ষেত্রেই গতি শ্লথ হয়ে গেছে।

অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, গত দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ যেরকম স্বাচ্ছন্দ্যে দেশ পরিচালনা করেছিল তৃতীয় মেয়াদে এসে সেই সাবলীলতায় কোথায় যেন ছন্দপতন হয়েছে।

গত ১১ মাসে সরকার অনেকগুলো ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। অনেকগুলো ক্ষেত্রেই সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলা চলে। গত ১১ মাসে জনগন সরকারের ১১টি ব্যর্থতা চিহ্নিত করেছে।

১. পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি
পেঁয়াজের মূল্য ধরে রাখতে না পারা ১১ মাস বয়সী সরকারের হয়তো সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। লাগামহীন ভাবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি যে যৌক্তিক নয় তা সরকারের নীতি নির্ধারকরাও স্বীকার করেছেন। কিন্তু পেঁয়াজের সিন্ডিকেট বা পেঁয়াজের মুনাফা বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পেঁয়াজের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি এবং গুজব ছড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি এবং সরকারে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

২. অর্থনীতিতে স্লথ গতি
গত দুই মেয়াদে সরকারের অর্থনীতি ছিল অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা। সেই অগ্রযাত্রার অর্থনীতিতে যেন হঠাৎ করেই ভাটার টান দেখা যাচ্ছে। সবকটি সূচকে নিম্নগামিতা একমাত্র প্রবাসী আয় ছাড়া কোনো ক্ষেত্রেই তেমন সাফল্য নেই। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হলেও বিনিয়োগে আগ্রহ নেই বেসরকারি উদ্যোক্তাদের।

৩. পরিবহন খাতে নৈরাজ্য
এ বছর সরকার নতুন পরিবহন আইন প্রনয়ন করেছিল। সেই পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে সরকার। সরকারের নতুন সড়ক আইনকে চ্যালেঞ্জ করে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে যায়। আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে পিছু হটতে হয়। মনে করা হয় পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে সরকারের যে দ্বিধা দ্বন্দ্ব এটাকে সাধারণ মানুষ ব্যর্থতা হিসেবে দেখছে।

৪. বায়ু দূষণ পরিস্থিতি
বায়ু দূষণ পরিস্থিতি বাংলাদেশে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে আর এ বিষয়ে যেনো কোন অভিভাবক নেই। সরকার প্রথমে দৃষ্টি দেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে তখন কোনো কোনো মহল নড়েচড়ে বসলেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রনে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাননি।

৫. মুখ থুবড়ে পড়া দূর্নীতি বিরোধী অভিযান
সরকার তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করার সময় যে অঙ্গিকারগুলো করেছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল দূর্নীতি বিরোধী অভিযান। আর এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন। শুদ্ধি অভিযানে কয়েকজন যুবলীগ নেতা ও আওয়ামী লীগের মাঝ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেপ্তারের পর এই অভিযান গতিহীন হয়ে পড়েছে। এক অর্থে  দূর্নীতি বিরোধী অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে। এটাকেও সরকারের একটা ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ।

৬. ভারতের সঙ্গে হঠাৎ শীতল সম্পর্কের আভাস
ভারত তিস্তার পানি নিয়ে এখন কোন কথাই বলছেনা। আবার নাগরিকত্ব আইন করে বাংলাদেশের উপর নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের সাথে এই টানাপড়েন সরকারের ভারতের সঙ্গে দাবি-দাওয়া নিয়ে আলাপ আলোচনা কমে গেছে এমন অভিযোগ উঠছে- এটাকেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণে একটা ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করছে। 

৭. ক্রিকেটে কালো মেঘ
ক্রিকেটারদের আন্দোলন তারপর সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা এবং ক্রিকেট বোর্ডের সাথে ক্রিকেটারদের শীতল সম্পর্ক- সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে একটি কালো মেঘ তৈরি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সরকার গত দুই মেয়াদে যতটা ক্রীড়াবান্ধব ছিল যত সাফল্যের সঙ্গে ক্রিকেটকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যত সচেষ্ট ছিল সেটা যেন হঠাত করে ভাটা পড়েছে। বিশেষ করে ক্রিকেট বোর্ডের নেতৃত্বকে ব্যর্থ হিসেবেই অবিহিত করছে অনেকে।

৮. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অস্থিরতা
তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে সরকার একের পর এক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা রকম অস্থিরতায় পড়ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখনো অস্থিরতা চলছে। আন্দোলনের মুখে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করতে হয়েছে। আরো অনেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে রয়েছে নানারকম অভিযোগ।

৯. লাগামহীন ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হলেও এখনো বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মারামারি-সংঘর্ষ, শিক্ষকের উপর হাততোলা সহ নানা অভিযোগ প্রতিনিয়তই উঠছে। ছাত্রলীগের লাগাম এখনো টেনে ধরতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ।

১০. বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরে আনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা

জাতির পিতার হত্যকারী যারা বিদেশে আছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু এ যেন শুধু কথার কথাই থেকে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদরকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি।

১১. কথায় কথায় পেশাজীবিদের ধর্মঘট
পেট্রোল পাম্পে ধর্মঘট, পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘট, নৌ পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটসহ নানা অস্থিরতা তৈরী হয়েছে। সরকারকে যেন মাসিক ভিত্তিতে ধর্মঘট মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পেশাজীবি গ্রুপগুলো নানা রকম যৌক্তিক অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলছে। এই ধর্মঘটগুলোর ব্যাপারে আগাম আঁচ করতে না পারা যেমন পেশাজীবিদের আস্থায় নিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান না করতে পারাও সরকারের একটি ব্যর্থতা।

মনে করা হচ্ছে, প্রত্যেকটি ব্যাপারে সাময়িক এবং সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এই ব্যর্থতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!