• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫ ভুলে করোনা মহামারীর শঙ্কায় বাংলাদেশ


সোনালীনিউজ ডেস্ক এপ্রিল ৫, ২০২০, ০৯:৪২ পিএম
৫ ভুলে করোনা মহামারীর শঙ্কায় বাংলাদেশ

ঢাকা: অনেকেই আশা করেছিলেন যে, বাংলাদেশ হয়তো করোনা মোকাবেলা করতে পারবে। করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ শুরু থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু সমন্বয়হীনতা এবং কিছু মারাত্মক ভুলের কারণে বাংলাদেশ এখন করোনা ঝুঁকিতে পড়েছে। করোনা মহামারী রূপে বাংলাদেশের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদিও আগেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা মহামারীর আশঙ্কার কথা বলেছিল। কিন্তু তারপরও আমরা আশা করেছিলাম নানা কারণে বাংলাদেশে হয়তো করোনার ব্যাপক বিস্তৃতি হবে না। কিন্তু রোববার (৫ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে তথ্য দিয়েছে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে যে, খুব বড় কোনো ব্যতিক্রম না ঘটলে আমরা করোনা মহামারীর ঝুঁকির মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এক্ষেত্রে আমাদের ভুলগুলো কী ছিল, সেটা আমরা একটু দেখে নেই।

জনগণের সচেতনতার অভাব

আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ধরনের সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হলেও করোনার ভয়বহতা সম্পর্কে সাধারণ মানূষ সচেতন হয়নি।  এর একটা বড় কারণ ছিল যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করোনা নিয়ে যে প্রচার প্রচারণা তা ছিল সংবাদপত্র কেন্দ্রীক। সংবাদপত্রই এখন এক সংকটের মধ্যে পড়েছে, পাঠকশূন্যতার কারণে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টেলিভিশনে প্রচার প্রচারণা ছিল একেবারেই সীমিত। যার কারণে করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমাদের সাধারণ মানুষকে সরকার সচেতন করতে পারেনি। সাধারণ মানুষ মনে এই রোগের ভয়াবহতা এবং এই রোগের সংক্রমণের বিষয়ে যথেষ্ঠ সচেতন হয়নি। যে কারণে তারা ছুটির সময় ঘরে থাকার বদলে চায়ের আড্ডায় এবং নানা জায়গায় ঘুরে বেরাচ্ছে। বাজারে যাচ্ছে। সামাজিক মেলামেশাও তারা বন্ধ করেনি।

বিদেশফেরতদেরকে যথাযথভাবে বিচ্ছিন্ন করতে না পারা

বিদেশফেরতদেরকে যথাযথভাবে বিচ্ছিন্ন করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশে করোনা এসেছে বাইরের দেশগুলো থেকে। বিশেষ করে ইতালি, ইউরোপ থেকে যখন মানুষ বাংলাদেশে ফেরা শুরু করে তখনই করোনার বিস্তৃতি ঘটে। এ সনয় বিদেশফেরতদের বিচ্ছিন্ন করা এবং ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কঠোরভাবে সরকার নিশ্চিত করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার কারণেই করোনার সংক্রমণ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, যেটা এখন মহামারী হিসেবে আবির্ভুত হওয়ার অপেক্ষায়।

মসজিদে নামাজসহ সামাজিক সম্মিলনের জায়গাগুলো বন্ধ করতে না পারা

ধর্মীয় স্পর্শকাতর এই বিবেচনা থেকে আমরা বাংলাদেশের মসজিদে জামাতে নামাজ বন্ধ করতে পারিনি। অনেক সামাজিক সম্মিলনের জায়গা যেমন- বাজার হাট ইত্যাদিও বন্ধ করা যায়নি। এমনকি অতি উৎসাহী কেউ কেউ ত্রাণ বিতরণের নামে সম্মিলন ঘটিয়েছে, যা ছিল আরেকটি বীভৎসতা। এসব কারণেই আমরা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা প্রতিপালন করতে পারিনি।
এটি আরেকটি বড় ব্যর্থতা।

শহরতলীতে নজরদারির অভাব

ঢাকা শহর এবং শহরগু অঞ্চললোতেই করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে যে একটু নজরদারি ছিল। প্রধান শহরকেন্দ্রিক এই নজরদারি ছিল। অলিতে গলিতে চায়ের দোকানে মানুষের যে মেলামেশা, এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাওয়া, সেগুলো বন্ধ হয়নি। যার ফলে যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন ছিল সেটা আমরা করতে পারিনি।

সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত

সর্বশেষ কারণটা হলো সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত। বাণিজ্যমন্ত্রীর গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্তটা ছিল একটা আত্মঘাতী এবং চরম ভুল সিদ্ধান্ত। এছাড়াও ২৪ তারিখে যখন ছুটি ঘোষণা করা হলো, তার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবহন বন্ধ করার দরকার ছিল। কিন্তু তার পরের দিন যখন গণ পরিবহন বন্ধ করা হলো, তখন মানুষ ঢাকা ছাড়া শুরু করেছে। এই যে, ঢাকা থেকে ব্যাপক হারে মানুষের অন্য জায়গায় চলে যাওয়া সেটা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। আবার বাণিজ্যমন্ত্রীর অতি উৎসাহে যখন গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত হলো, তখন লোকজন গণপরিবহন উপেক্ষা করে যেভাবে পেরেছে চাকরি বাঁচাতে ঢাকা ফিরে এসে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনও আমাদের সময় আছে। যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের যদি আমরা দ্রুত পরীক্ষা করতে পারি, সামাজিক সংক্রমণের ক্লাস্টারগুলোকে যদি আমরা আলাদাকরতে পারি এবং যদি আমরা এই ছুটিটির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে মানূষকে বিচ্ছিন্ন করে রোগীদের সঙ্গে যারা মিশেছেন তাদেরকে চিহ্নিত করতে পারি, তাহলে হয়তো আমরা শেষ সযোগটি কাজে লাগাতে পারবো। তবে এটার জন্য শুধু সরকারকে কঠোর হলে হবে না। আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। এবং দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। তাহলেই আমরা হয়তো মহামারী মোকাবেলার সর্বশেষ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারবো।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!