• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের ১০ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২৬, ২০১৭, ১২:৫১ এএম
একাত্তরের ১০ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা

ঢাকা: বাঙালির জাতীয় জীবনে এক অবিনাশি স্মারক একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে লাল সবুজ পতাকা, স্বাধীন বাংলাদেশ। তবে সেই বিজয় যে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা পুরুষদের কাঁধে ভর করেই এসেছিল তা কিন্তু নয়। তাদের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে লড়াই চালিয়েছিলেন নারীরাও।

তবে একাত্তরের সেই নারীদের অবস্থা কী হয়েছিল সে কথা হয়তো আজকের প্রজন্মের অনেকেই জানেন না। আর জানেন না বলেই নিন্দার থু থু ছিটানো হয় তাদের দিকে। একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী ধর্ষণ করেছিল এ দেশের প্রায় চার লাখ মা বোনকে। আট থেকে আশি কেউই রেহাই পায়নি সেদিন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা তৃণমূলের অতি সাধারণ নারীদের বঞ্চনার ইতিহাস অজানাই থেকে গেছে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে। শুধু নগর কেন্দ্রিক ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে সেটার ব্যাপকতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। এ জন্য যেটা করা দরকার তা হলো, কাদা মাটির সোঁদা গন্ধসহ অবিকৃতভাবে সেই ইতিহাস তুলে আনা।

সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সীমাহীন উপেক্ষা আর বঞ্চনার চাবুকে ক্ষতবিক্ষত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বহুদিন থেকেই। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধে সবকিছু হারিয়েও থেকে গেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে, ইতিহাস থেকে অনেক দূরে- সেইসব বীরমুক্তিযোদ্ধা মায়েদের কয়েকজনকে দেশে প্রথম পালিত জাতীয় গণহত্যা দিবসে দেয়া হলো সম্মাননা।

শনিবার (২৫ মার্চ) বিকেলে দৈনিক ভোরের কাগজ কনফারেন্স কক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অবদানরাখা ও নির্যাতনের শিকার ১০ নারী মুক্তিযোদ্ধার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়।

এর আগে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে উপস্থিত ১০ জনসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের সকল নারী মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগকে স্মরণ করা হয়।

দেশের অনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাত্তরের নির্যাতিতা ৪৮ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গত ২০১৫ সালে ভোরের কাগজে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জেষ্ঠ প্রতিবেদক শরীফা বুলবুলের লেখা সেই প্রতিবেদনগুলো ‘বীরাঙ্গনা নয় মুক্তিযোদ্ধা’ শিরোনামে এবারের মহান একুশের গ্রন্থমেলায় গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে স্থান পাওয়া ১০ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে জানানো হলো সম্মাননা।

সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন- রাজধানীর তেজগাঁও রেলবস্তির কানন গোমেজ, রেজিয়া বেগম, নুরজাহান, রঙমালা, রাজিয়া বেগম ও মিরপুরের মিল্কভিটা বস্তির নাজমা বেগম, মিরপুর-১০ এর কাঞ্চন মালা, গোপালগঞ্জের বণিকপাড়ার কেয়া বিশ্বাস, চট্টগ্রামের আনোয়ারার আনোয়ারা বেগম ও পটিয়ার আছিয়া বেগম। ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে সম্পাদক শ্যামল দত্ত তাদের প্রত্যেকের হাতে ১০ হাজার করে টাকা ও সম্মাননা স্মারক ক্রেস্ট তুলে দেন।

সম্মাননা লাভ করার পর মুক্তিযোদ্ধা রেজিয়া বেগম বলেন, অনেক দুঃখী আমি। পৃথিবীতে কেউ আর বেঁচে নেই। রোগে শোকে আজ আমি মৃত্যুপথযাত্রী। কোনো রকমে দিনাতিপাত করি। আজ আমার এই সম্মননা পাওয়ার পরে অনেক কষ্টই কমে গেলো। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনে যে ক্ষতটা তৈরি হয়েছে তা মরার আগে শুকাবে না।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রেজিয়া বেগম বলেন, আমাকে ভাতা দেয়া না হলে এই শেষ বয়সে এসে না খেয়ে মরতে হতো। বলতে গিয়ে কান্নায় ভিজে ওঠে দুচোখ।

নারী মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক অধ্যাপক শহীদজায়া পান্না কায়সার, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

অনুষ্ঠানে দেশ বিরোধী সব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই কারার আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ধর্মের নামে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে লড়াই করতে হবে।

ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, এ দেশের মতো আর কোনো জাতিকে এতোটা রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে হয়নি। যেখানে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে নারী ও শিশুরা। অথচ স্বাধীনতার এতোটা বছর পরে এসেও সেই নারীরা তাদের যথাযথ মর্যাদা পায়নি।

লেখক ও অধ্যাপক শহীদজায়া পান্না কায়সার বলেন, প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা মা বোনের অন্তরে আজ বুকভাঙা কান্নার শব্দ। হৃদয়ে হাহাকারের ঢেউ। কোথায় কীভাবে, কোন কিনারায় অবহেলায় নিভৃতে পড়ে আছেন আমাদের নারী মুক্তিযোদ্ধারা তাদের খোঁজ কেউ রাখেন না। তাদের যুদ্ধ আজও শেষ হয়নি। এখনো তারা প্রতি মুহূর্তে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।  

নারী মুক্তিযোদ্ধা আছিয়া বেগম বলেন, বহুদিন থেকে আমরা শুনে আসছি নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দেয়া হবে। যে দিন স্বীকৃতি দেয় হবে সে দিন হয়তো আমরা আর থাকবো না।

পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন ‘বীরাঙ্গনা নয় মুক্তিযোদ্ধা’ বইটির লেখক ও ভোরের কাগজের জেষ্ঠ প্রতিবেদক শরীফা বুলবুল।

সোনালীনিউজডটকম/এন

Wordbridge School
Link copied!