• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাক্তারদের রোগী দেখার সময় কই


স্বাস্থ্য ডেস্ক মার্চ ৪, ২০১৮, ১১:২১ এএম
ডাক্তারদের রোগী দেখার সময় কই

ঢাকা: রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা গড়ে যে সময় দেন সেটি এক মিনিটও নয়। আর তাতে কতটুকুই বা রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা সম্ভব। ডাক্তারদের হালচাল দেখতে সরজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে। 

সেখানে সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে ভিড় করেন সারা দেশ থেকে আসা নানা ধরনের রোগী এবং তাদের সাথে থাকা আত্মীয় স্বজন।

মোহাম্মদ আবুল কাশেম বগুড়া থেকে এসেছেন ভাতিজাকে নিয়ে। কিন্তু তাকে ভর্তিই করাতে পারেন নি। অনেক দূর থেকে এসে তাই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন অন্য কোথাও।

তিনি বলছেন, ‘এখানে আসলে ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন দিয়ে বলে অমুক যায়গায় যাও। এই কারণে আমি ভুক্তভুগি।’

নোমান গাজী ময়মনসিংহ এসেছেন। তার পিত্ত-থলীর পাথর হয়েছে সেটির চিকিৎসার জন্য। তিনি বলছেন, ‘ডাক্তাররা বাংলাদেশে রোগীদের সময় দেয়না সেটি ঠিকই। তার আমি নিজে প্রমাণ। কখন দেখবে এখনো বলা যাচ্ছে না। এখন থেকে প্রায় চার ঘণ্টা আগে আসছি।’

এই রোগী ও আত্মীয়দের গলায় স্বভাবতই হতাশার সুর। যার কারণ ফুটে উঠেছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের জরীপে। যেখানে রোগী দেখায় সময় দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে।

অথচ বাংলাদেশে রোগী প্রতি গড়ে মোটে ৪৮ সেকেন্ড সময় দেয়া হয়। মিনিটের কাটায়ও তা পৌঁছায় না চিকিৎসকের সময়।

যেখানে এই জরীপে সুইডেনের মতো সাড়ে বাইশ মিনিট না হলেও আবুল কাশেমের মতে অন্তত দশ মিনিট তো দেয়া উচিত।

কিন্তু বহির্বিভাগে ডাক্তারদের কক্ষে গিয়ে দেখা গেলো সেই সুযোগ মেলা খুব কঠিন। ডাক্তারের মনোযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে রোগীদের।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিলাম মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা চৌধুরীর কাছে। তিনি বলছেন, ‘যেমন ধরেন আমাদের রুমে আমরা এখন দুজন আছি।

যদি এই রুমে দুশ রোগী হয়, আর আমার কর্মঘণ্টা যদি আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ধরি তাহলে আপনি নিজেই হিসেব করুন এক একজনকে কজন করে রোগী দেখতে হয়। মুল সমস্যাই হল জনসংখ্যা।’

কিন্তু প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে অনেক টাকা ভিজিট দিয়েও যথেষ্ট মনোযোগ পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের জরীপ মতে ভারতে চিকিৎসকেরা রোগীকে প্রায় আড়াই মিনিট দেন। সেটিও খুব কম।

তবুও সেখানেও বাংলাদেশ থেকে বছরে হাজার হাজার রোগী যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। বাংলাদেশে ডাক্তারদের উপরে রোগীদের যেন আস্থার সংকট রয়েছে।

জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা কম হওয়াই মুল সমস্যা হিসেবে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।

গত মাসেই জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশে সরকারি নানা ধরনের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় হাজার রোগী প্রতি একজন করে চিকিৎসক।

শিশুদের চিকিৎসক রাজেশ মজুমদার বলছেন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বাড়লে সেবার মানও বাড়বে। তিনি বলছেন, ‘এত রোগী একজন ডাক্তার কিভাবে সামাল দেবে। সকালে এসে দেখি গিজগিজ করছে রোগী। আমাদের আন্তরিকতার সাথে সেবা দেয়া চেষ্টা করি। যদি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক যদি বাড়ে তাহলে সেই সেবার মানটাও বাড়বে।’

কিন্তু গড়ে রোগী প্রতি ডাক্তারের সংখ্যা যতদিন না পর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে ততদিন রোগীদের আক্ষেপ রয়েই যাবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাক্তাররা যদি আন্তরিকতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্বপালন করেন তাহলে জনসংখ্যা কোনো সমস্যা নয়। তার প্রমান ভারত। সূত্র: বিবিসি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!