• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দলে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার তৃণমূল


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৩, ২০১৭, ০৪:৪৭ পিএম
দলে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবিতে সোচ্চার তৃণমূল

ঢাকা: দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা এনে দিতে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি তুলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তারা বলেছেন, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা এনে দিলে ‘শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার’ এই স্লোগানও আর দিতে হবে না।

গত শনিবার (২০ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সারাদেশ থেকে আসা তৃণমূল নেতারা এ দাবি তোলেন। তারা বিভিন্ন জেলার রাজনৈতিক চিত্র, দলের ভেতরে বিভিন্ন অসঙ্গতি, এমপি-মন্ত্রীদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের দূরত্ব, দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। দলীয় মুখপাত্র নিয়েও কথা বলেন তৃণমূল নেতারা।

বর্ধিত সভায় প্রত্যেক জেলার দলীয় কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ল্যাপটপ উপহার দেন। এগুলো তৃণমূল নেতাদের হাতে তুলে দেন শেখ হাসিনা। এরপর তৃণমূল থেকে আসা ৮ বিভাগের ৮ জন নেতা বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনা মঞ্চে বসে থেকে সবার বক্তব্য শোনেন। পরে সবার অভিযোগ, অনুযোগ ও পরামর্শের জবাব দেন তিনি। রুদ্ধদ্বার এই সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যের শুরুতেই রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক যে বক্তব্য দেন, তাতে ভয় পাওয়ার কারণ আছে।’  রংপুর জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন কমিটি কীভাবে করা হচ্ছে, তা জানেন না জানিয়ে জেলাটির এই নেতা বলেন, ‘কমিটি ঢাকা থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’ তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে জামায়াত-শিবিরের নেতারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন রাজু। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে রেজাউল করিম বলেন, ‘এমপি-মন্ত্রীদের ঘিরে একটি বলয়ের সৃষ্টি হয়। ওই বলয়ের বাইরে তারা আসতে পারেন না।’

কোন্দল নিরসনের উপায় বের করার তাগিদ দিয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা ১৬ কোটি লোক থাকব।’

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনর রশীদ বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি যদি শৃঙ্খলার বাইরে যাই, তাহলে আমাকেও চিরতরে বহিষ্কার করে দেন।’ সহযোগী সংগঠনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ উল্লেখ করে সেগুলো পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। দলের বক্তব্য এক স্থান থেকে আসার পক্ষে মত জানিয়ে হারুন বলেন, ‘স্পোকসম্যান যেন একজন হয়। অনেকে হলে আমাদের জন্য অসুবিধা।’ 

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ দলের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেয়ার কথা বলেন।

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়ে ময়মনসিংহের জহিরুল হক খোকা বলেন, ‘আপনি যদি মাফ করে দেন.. বুঝে গেল। তারপর একই কাজ করবে। আর মাফ করবেন না।’ উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সদস্যদের মধ্যে ‘অশুভ প্রতিযোগিতার’ কথা উল্লেখ করে তার অবসান ঘটাতে বলেন তিনি। সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন করছেন। এমপিরা কী করছেন; তাও দেখতে হবে।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দীন আহমদ কামরান স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে বলেন, ‘সিলেটে ১৯টি সংসদীয় আসনে এমপিরা বিজয়ী হওয়ার পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশাল পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। জনগণ এবং সাধারণ নেতাকর্মীরা এমপিদের কাছে যেতে পারে না।’

চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদও সহযোগী সংগঠন সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘সহযোগী সংগঠনগুলোকে এখান (ঢাকা) থেকে বিপরীতমুখী করা হলে অসুবিধা হয়।’ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেব থানা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিকে রাখতে চান না।’

তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে নিজ জেলার নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নৌকা প্রতীক যাদের দেব তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলের পক্ষে কাজ করতে হবে। কেউ অন্য কাউকে সমর্থন দেবেন না। তিনি বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করতে সব জেলার নেতাকে বছর শেষে সাংগঠনিক রিপোর্ট দিতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!