• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

জলাবদ্ধতা: নোয়াখালীর ১৭৭ বিদ্যালয়ে ব্যাহত শিক্ষা


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৯, ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
জলাবদ্ধতা: নোয়াখালীর ১৭৭ বিদ্যালয়ে ব্যাহত শিক্ষা

ঢাকা: অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর ১৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা পড়েছেন অভূতপূর্ব ভোগান্তিতে। পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় জেলার বিভিন্ন সড়ক, মহল্লা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পানিতে ডুবে রয়েছে। এতে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে গেছে, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, আর শিশুদের শিক্ষাজীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে—বেগমগঞ্জ উপজেলার ৮১টি, সোনাইমুড়ীর ৩৪টি, কোম্পানীগঞ্জের ১৭টি, কবিরহাটের ২২টি, সেনবাগের ৯টি, সুবর্ণচরের ৫টি এবং সদর উপজেলার ৯টি বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়ের আঙিনা ও মাঠে হাঁটুপানি জমে থাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যালয় খোলা থাকলেও উপস্থিত শিক্ষার্থী হাতে গোনা কয়েকজন। যারা আসে, তাদেরও প্রতিদিন ভেজা জামাকাপড়ে ক্লাস করতে হচ্ছে, যা শুধু অস্বস্তিকরই নয়, বরং স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।

দীর্ঘ সময় ভেজা পরিবেশে থাকার কারণে শিশুদের মধ্যে ঠান্ডা-জ্বর, চর্মরোগ, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিতি শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে এবং পরীক্ষার ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শিক্ষকদেরও ভোগান্তি কম নয়। বিদ্যালয়ের প্রবেশপথ ও মাঠে পানি জমে থাকায় তারা প্রতিদিন আসা-যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন। কিছু বিদ্যালয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হলেও এগুলো পিচ্ছিল হওয়ায় শিশুদের পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার মধ্য করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, মাঠে পানি জমে থাকায় অনেক দিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে।

চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলে, পুরো মাঠে পানি। আসা-যাওয়ার পথে জামাকাপড় ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।

এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগে আমার মেয়ে মাকসুদা একাই স্কুলে যেত। কিন্তু পানি ওঠার পর থেকে আমাকে সঙ্গে করে নিতে হয়। এতে তার পড়াশোনা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, নোয়াখালীর অনেক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা দুর্বল বা অকার্যকর। বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টির পর পানি বের হওয়ার পথ না থাকায় সড়ক ও বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে থাকে দীর্ঘ সময়। অনেক বিদ্যালয়ের মাঠ নিচু হওয়ায় সামান্য বর্ষাতেই তা জলাশয়ে পরিণত হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাত নাসিমা হাবীব বলেন, আশপাশে পানি থাকায় বিদ্যালয় আঙিনা ও মাঠেও জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রমে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নিচু মাঠ ভরাটের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবিদদের মতে, প্রাথমিক স্তরে দীর্ঘ অনুপস্থিতি শিশুদের শেখার ধারাবাহিকতা ভেঙে দেয়। তারা পরীক্ষায় ভালো করতে পারে না, এমনকি পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। এছাড়া খেলাধুলা ও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ হয়ে গেলে শিশুদের মানসিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি, বিদ্যালয়ের মাঠ ও আঙিনা দ্রুত উঁচু করা, কার্যকর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণ, বর্ষা মৌসুমে বিকল্প নিরাপদ প্রবেশপথ তৈরি, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতা কার্যক্রম চালু করা।

তাদের মতে, সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতিবছর বর্ষাকালে একই সংকটে পড়বে নোয়াখালীর শত শত বিদ্যালয়।

ওএফ

Wordbridge School
Link copied!