• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে আয়

বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ বেড়েছে


এস এম মুকুল জানুয়ারি ৫, ২০২২, ০১:১৭ পিএম
বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ বেড়েছে

ঢাকা : করোনার কারণে সাময়িক গতি কমলেও সবজি রপ্তানিতে ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে বাংলাদেশের। একসময় দেশের বিশেষ কয়েকটি জেলায় বিশেষভাবে সবজির চাষ হতো। এখান সব জেলাতেই সারা বছর যেভাবে সবজির চাষ হচ্ছে। সুফল পাচ্ছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে দেশও উপকৃত হচ্ছে। উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি রপ্তানি বাড়ছে প্রতিবছর। গত অর্থবছরে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল চার কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এক দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় প্রায় চারগুণ বেড়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, নেপাল, ব্রুনাই, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে আলু ও সবজি রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে পৌনে দুই কোটি কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবার কমবেশি সবজি চাষ করে। বাড়ির উঠান বা খালি জায়গা, জমির পাশের উঁচু স্থান, আইল, টিনের চাল এবং পুকুরে মাচা দিয়ে কৃষকেরা সবজির চাষ করছেন। ফলে মোট কৃষিজমির পরিমাণ কমলেও সবজি চাষ বেড়েছে।

বিদেশে বাংলাদেশের শাক-সবজির ব্যাপক চাহিদা : বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের শাক-সবজির ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু চাহিদার মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে। পণ্য পরিবহনে নানান অসুবিধা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাক-সবজি রপ্তানি করে ৬৫০ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের ৫০ জাতের সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়। তবে যেসব দেশে বাংলা ভাষাভাষীরা বসবাস করছে সেসব দেশে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানির চাহিদা বেশি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, প্রবৃদ্ধির এ হার বজায় থাকলে আগামীতে সবজি রপ্তানি খাতে আয় ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দেশের রপ্তানিকৃত সবজির প্রায় ৬০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যে এবং বাকি ৪০ শতাংশ ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে যায়। এসব সবজির মধ্যে করলা, কাকরোল, টমেটো, পেঁপে, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, লাউ, কচুরলতি, কচুরমুখী, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, কাঁঠাল, শসা, চিচিঙ্গা, লালশাক, পুঁইশাক, প্তলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, পটল, ঝিঙা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত সবজির মধ্যে রয়েছে- ডাঁটা, কচুরলতি, শিমের বিচি, কাঁচকলা, কলার প্তল, কচুশাক, কাঁঠাল বিচি প্রভৃতি।

বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ বেড়েছে : বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ বেড়েছে। উৎপাদনও বাড়ছে প্রতিবছর। সবজি চাষে দেশে বিপ্লব হয়েছে। বর্তমানে শুধু সবজিই চাষ করেন এমন কৃষক অনেক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তারা জানান, একসময় দেশের বিশেষ কয়েকটি জেলাতে বড় পরিসরে সবজির চাষ হতো। বর্তমানে সব জেলাতেই সারা বছর সবজির চাষ হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। নানা পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। নতুন নতুন জাত এসেছে। যে কারণে সারাবছর সবজি পাওয়া যাচ্ছে।  দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারের জন্য সবজি উৎপাদন করছেন চাষিরা। ভালো লাভও পাচ্ছেন। ফলে শিক্ষিত তরুণরাও ঝুঁকছেন সবজি চাষে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সবজি উৎপাদনের হার বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

উৎপাদনে রেকর্ড : এক হিসাবে দেখা গেছে, দেশের চাষযোগ্য জমির মাত্র ১.৮ শতাংশ জমিতে শাকসবজি চাষ হয়। দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব সবজির ৯০ শতাংশ বীজ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিবছর উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে ৪০ ভাগ সবজি নষ্ট হচ্ছে। সবজি রক্ষা এবং রপ্তানি বাড়ানোর বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ ও পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শাকসবজি উৎপাদনে নতুন রেকর্ড অর্জন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পর্যবেক্ষক দল শীতকালীন সবজি উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ স্বচক্ষে দেখতে এখন বাংলাদেশ সফর করছে। প্রতিনিধি দলটি দেশের সবজি উৎপাদন এবং গুণগতমান নিয়ে ‘যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছে। জানাগেছে এবার রবি মৌসুমে ৫ দশমিক ২৮ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এবার দেশে সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হবে। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ উদ্ভাবন ও কৃষিতে আধুনিক চাষ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে দিন দিন সবজি উৎপাদন বাড়ছে। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (BARI) এ পর্যন্ত ৫০ প্রকার সবজির আবিষ্কার করেছে। এর মধ্যে বারি টমেটো ৪, ৫ এবং ৮, বারি শিম-১, বারি ঢ্যাঁড়স-১ ইত্যাদি সারাদেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে কোটি কৃষকের পাশাপাশি লাখো লাখো শিক্ষিত বেকার তরুণ উদ্যোক্তা শাক-সবজি চাষ লাভজনক হওয়ায় নিজেদের জমির পাশাপাশি বর্গা জমি নিয়ে সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে।

বাড়ছে রপ্তানি : রপ্তানির ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭৫ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানি শুরু হলেও ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্ববাজারে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা। বর্তমানে নরসিংদী,  কিশোরগঞ্জ, মিরসরাই, যশোর, বগুড়া, রাজশাহী, মাগুরা, মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, কক্সবাজার, সিলেট ও গাজীপুরের সবজি রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।  বিদেশে বাংলাদেশের শাকসবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদার মাত্র ২ থেকে ৫ শতাংশ রপ্তানি করতে পারছেন উদ্যোক্তারা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গত অর্থবছরে ৬৫০ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার টাকার সবজি রপ্তানি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৫০ দেশে বাংলাদেশের ৫০ জাতের সবজি ও ফলমূল রপ্তানি হয়।  যেসব দেশে বাংলাভাষীরা বসবাস করছে, সেসব দেশে বাংলাদেশের সবজির চাহিদা বেশি। দেশের রপ্তানিকৃত সবজির প্রায় ৬০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যে এবং বাকি ৪০ শতাংশ ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে যায়।  বিশেষ করে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বাংলাদেশের শাকসবজি ও ফলমূলের ব্যাপক চাহিদা। শুধু দুবাইয়ে বাংলাদেশি শাকসবজি ও ফলমূলের চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৬০ টন; লন্ডনে ৩০ টন। কার্গো বিমান চালু, বিদেশী বিমানগুলোয় পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব দেশে এসব পণ্যের বাজার আছে সেসব দেশে ফ্লাইট বাড়ানো, চলমান ভর্তুকি অব্যাহত রাখাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ব্যাপক সম্ভাবনাময় এখাতে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আরো অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সবজির ভালো চাহিদা থাকায় দিন দিন বেড়ে চলেছে সবজি রপ্তানি।

ফল ও সবজি রপ্তানি বাড়াতে পরিকল্পনা : বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১২.১ মিলিয়ন মেট্রিক টন ফল এবং ১৬.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব উৎপাদিত ফল ও সবজি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব। কিন্তু উৎপাদিত সবজি ও ফলের সঠিক গুণগত মানের অভাব, নিরাপদ উৎপাদনের অভাব, গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিসের (জিএপি) অভাব, অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহার, চুক্তিভিত্তিক কৃষক না থাকা (কন্ট্রাক্ট ফার্মিং), অ্যাক্রেডিটেশন ল্যাবরেটরি না থাকা, তদারকি ও মান সনদের দুষ্প্রাপ্যতা, রপ্তানির জন্য বিশেষ অঞ্চল না থাকাসহ ২০ ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এ ক্ষেত্রে। ফল ও সবজি রপ্তানি বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাবনা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় পিছিয়ে পড়ছে এই খাত। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে ফল ও সবজি রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ জন্য প্রাথমিকভাবে সাতটি ফল ও সবজি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই ধরনের ফল হলো- আম ও লেবু। আর পাঁচ ধরনের সবজি হলো- দেশীয় শিম, বেগুন, শসা, পটোল ও করলা। রপ্তানিযোগ্য সবজি ও ফলমূল রাজধানীর শ্যামপুরের বিসিক শিল্পনগরীতে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে বাছাই করে প্যাকেটজাত করা হয়। আবার প্যাকেট করা এসব পণ্যের সজীবতা ধরে রাখতে ঢাকার পূর্বাচলে কুলিং চেম্বার হচ্ছে। পাশাপশি আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী সবজি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের উন্নত বীজ, কীটনাশক ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে সবজি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এখন রপ্তানিতে চোখ রাখছে বাংলাদেশ। কীভাবে সবজি রপ্তানি করা যায়, তার কলাকৌশলগুলোতে এখন বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। কিন্তু সবজি রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। সেগুলো অতিক্রম করে কীভাবে সবজি রপ্তানিতে সফল হওয়া যায়, তার জন্য একটি রোডম্যাপের খসড়া প্রণয়ন করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত সেই রোডম্যাপটি এরই মধ্যে জমা পড়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। রোডম্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে নীতিগত সহায়তা দেওয়া গেলে এই খাত দেশের তৈরি পোশাক শিল্পকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশাবাদী রপ্তানিকারকসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

দেশের মাটিতে বিদেশি সবজি : দেশে প্রচুর চাহিদা থাকায় নিজ তাগিদে বিদেশি সবজি চাষ করছেন কৃষকেরা। এসব চাষে কোনো প্রশিক্ষণ নেই তাঁদের। নিজেরাই বীজ সংগ্রহ করে নেমে পড়েছেন চাষে। বিদেশি এসব সবজি সাধারণ মানুষ যেমন কেনে পাশাপাশি রেস্টুরেন্টগুলোতেও চাহিদা রয়েছে। ফলে কৃষকরা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। সরবরাহ করছেন সারা দেশে। লেটুসপাতা, চায়নিজ পাতা, ক্যাপসিকাম, বিট রুট, ব্রুকলি, রেড ক্যাবেজ, স্কোয়াশ, ফ্রেঞ্চ বিন, সুইট কর্ন, বেবি কর্ন, থাই আদা, থাই তুলসী, লেমনগ্র্যাস, স্যালারি পাতা, শিমলা মরিচ, চায়নিজ ক্যাবেজ- ক্ষেতের পর ক্ষেতজুড়ে চলছে এসব বাহারি বিদেশি সবজির চাষ। বগুড়ার তিনটি উপজেলা শিবগঞ্জ, গাবতলী ও শাজাহানপুর ঘুরে দেখা যায়, খেতের পর খেতজুড়ে চলছে বিদেশি সবজির চাষ। উপজেলার কয়েকটি গ্রামে বছরে গড়ে ৪০০ মেট্রিক টন (১০ হাজার মণ) বিদেশি সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। বগুড়ায় উৎপাদিত এসব সবজি যাচ্ছে রাজধানীর শেরাটন, সোনারগাঁও, ওয়েস্টিনের মতো তারকা হোটেলে। সুপার শপগুলোয় যেসব বিদেশি সবজি থরে থরে সাজানো থাকে, সেগুলোরও বেশির ভাগের উৎস বগুড়ার এসব গ্রাম। তা ছাড়া সারা দেশের নামীদামি চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে সরাসরি সরবরাহ করা হচ্ছে এখান থেকে। এসব রেস্টুরেন্টে সবজির জোগান আগে আসত বিদেশ থেকে। এভাবে চাষ বাড়তে থাকলে শিগগিরই এসব সবজি বিদেশেও রপ্তানি হবে বলে আশাবাদী কৃষকেরা। বিদেশি সবজি চাষের কারণে সাভারের চায়না গ্রামের উদ্যোক্তারা লাভের মুখ দেখলেও, করোনা মহামারি ও দফায় দফায় বন্যায় ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে তাদের। ক্যাপসিকাম, বেবিকর্ন, লেটুসপাতা কিংবা ব্রুকলি, যা ফাস্টফুড ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার তৈরির অন্যতম উপাদান। দেশে চাইনিজ খাবারের জনপ্রিয়তায় চাহিদা বাড়তে থাকে এসব সবজির। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে সাভারের মেইটকা ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের কৃষকরা করছেন বিদেশি সবজি চাষ। বিশ বছর আগে যার হাত ধরে শুরু এই বিদেশি জাতের সবজি চাষ। সেই কোব্বাদ আলী এখন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করোনায় ও গত বন্যায়। কিন্তু এই ক্ষতি কাটাতে যখন নতুন উদ্দমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন, ঠিক তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে  সব হারানোর শংকায় এ  গ্রামের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ।

দেড় কোটি বসতভিটায় বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন সম্ভব : সবজি চাষ এখন লাভজনক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বনির্ভরতা করছে এসব তরুণরা। তাদের প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ। পাশাপাশি আরো অনেকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে। তাই শিক্ষিত যুব সমাজ এখন বেশি মনযোগি হচ্ছে কৃষিভিত্তিক এই লাভজনক প্রকল্পে। ফলে বাড়ছে গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক তৎপরতা। বর্তমানে দেশে বার্ষিক মোট সবজি উৎপাদন হয় ২২ লাখ টন, যেখানে ১৯৭০ সালে উৎপাদন হতো মাত্র ৭ লাখ টন। তিন দশকে দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণের বেশি। দেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২০ লাখ টনের অধিক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমানে স্বাভাবিক পর্যায়ে যে পরিমাণ সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, শুধু মানসম্মত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৩০ ভাগ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব। এজন্য গ্রামে গ্রামে কৃষকদের গ্রুপ তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উন্নতজাতের বীজ উৎপাদনে দেশের হাজার হাজার নার্সারিকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জানা গেছে, ইরি’র ফসল প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৪৬ হাজার মহিলা বীজ নিয়ে কাজ করছেন। এই আওতাকে আরও সম্প্রসারিত করে একাজে মহিলাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ইরি সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রতিটি পরিবার যদি প্রতিদিন এক কেজি করে সবজি উৎপাদন করে, তাহলে দেড় কোটি বসতভিটা থেকে বছরে প্রায় ৫৫ লাখ টন সবজি উৎপাদন সম্ভব।

লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার পরিবার সবজি চাষ করে সুখের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। প্রতি বছর এ উপজেলার ৩ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমি থেকে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপন্ন হচ্ছে। উৎপাদিত এসব সবজির বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকারও বেশি। উপজেলায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে চাষির সংখ্যা। জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ। কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়কের ২০ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ শসার ক্ষেত। এ এলাকার ১৪টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মাঠে এখন শসার চাষ করে। স্থানীয় কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পীরগাছা উপজেলা, নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডিমলা, কুড়িগ্রাম সদর, গাইবান্ধা সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, দিনাজপুর সদর, কাহারোলসহ বিভিন্ন স্থানের শত শত সবজি চাষি প্রতিদিন রিকসা ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে সবজি নিয়ে স্থানীয় পাইকারি হাট-বাজারগুলোতে ভিড় করে। এসব জেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার শীতকালীন শাকসবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকরি সূত্রে বসবাস করছে। রপ্তানির এ বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। এজন্য গ্রামে গ্রামে কৃষকদের গ্রুপ তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। উন্নতজাতের বীজ উৎপাদনে দেশের হাজার হাজার নার্সারিকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জানা গেছে, ইরি’র ফসল প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ৪৬ হাজার মহিলা বীজ নিয়ে কাজ করছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!