• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম


মো. আবু তালহা তারীফ মার্চ ৮, ২০২১, ১২:৩২ পিএম
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম

ঢাকা : নারী জন্ম নিলেই হত্যা, তাদের ওপর অত্যাচার-নারী জাতির এহেন ক্রান্তিকালে তাদের শোষণ, অবহেলা ও নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করে সম্মান ও গৌরবময় জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করতে আবির্ভূত হন হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নারীকে মানবীয় মর্যাদায় সমাসীন করেছে এবং তার মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। মানবজাতির যে সম্মান ও মর্যাদার ঘোষণা ইসলামে দেওয়া হয়েছে সে সম্মান ও মর্যাদা লাভের ব্যাপারে নারী-পুরুষে কোনো ভেদাভেদ করা হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আদম-সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি। তাদের উত্তম রিজিক দান করেছি। আর আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৭০)

বিশ্বাসের স্বাধীনতা নারীর ব্যক্তিত্বকে সমুজ্জ্বল করেছে। ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া যিনি বিশ্বাসী ছিলেন। হজরত মরিয়ম বিশ্বাসী ছিলেন। আল্লাহর কাছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে রামলা বিনতে আবু সুফিয়ান পিতার মতো অবিশ্বাসী ছিলেন না। হজরত খাদিজা নারী হিসেবে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীর গৌরব গ্রহণ করেন। বিয়েতে নারীর অনুমতি প্রথম নেওয়া হয় এমনকী নারীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে বৈধতা পায় না। নারীর রয়েছে উপার্জন করার অধিকার এবং নিজ পছন্দমতো ব্যয় করার স্বাধীনতা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.) কুটিরশিল্পে পারদর্শী ছিলেন এবং এর উপার্জন তিনি আল্লাহর পথে দান করতেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৩২)

নারীর জন্য খরচ করার বিধান দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। নারীর যখন সংসার হবে তখন তার যাবতীয় খরচ বহন করবে স্বামী। নারীর সংসারে যদি কোনো অমিল কিংবা কলহ দেখা দেয় তবে দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করবে। সম্পর্ক ছিন্ন নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি ও কলহ করা যাবে না। আলাদা হওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং কোনো মোহর সাব্যস্ত করার আগে যদি তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও তোমাদের কোনো পাপ নেই। তবে তাদেরকে কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং কম সামর্থ্যবানদের জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী। যে খরচ প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের ওপর দায়িত্ব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-২৩৬)

নারী যত ধনীই হোক না কেন আর স্বামী যত গরিবই হোক না কেন, তখনো নারীর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব স্বামীর। আবার পিতামাতা, স্বামী ও নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিতেও রয়েছে নারীর জন্য সম্মানজনক উত্তরাধিকার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ রয়েছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, অল্প হোক কিংবা বেশি-এ অংশ (আল্লাহতায়ালা কর্তৃক) নির্ধারিত।’ (সুরা নিসা, আয়াত-৭)

নারী-পুরুষের যৌথ প্রয়াস একটি সমাজ রচনা করবে এটাই কাম্য। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নারীর মানবীয় প্রকৃতি, মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণ করে। পক্ষান্তরে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা ও বন্ধনহীন সম্পর্ক নারীকে দুর্বল করে তোলে। তাই অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবৈধ যৌন সংযোগের নিকটবর্তী হইও না, তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩২) নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে নারীর প্রতি বৈষম্য। সহিংসতার প্রকৃতি হতে পারে শারীরিক, মানবিক ও যৌন। এসব ঘটতে পারে ঘরে অথবা বাইরে। পারিবারিক নির্যাতন ছাড়াও আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান হারে রয়েছে ইভটিজিং, নারী পাচার, অ্যাসিড নিক্ষেপ, অপহরণ, যৌতুক, ধর্ষণ, হত্যার মতো অপরাধ। জন্মের দিন থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত নারী ঝুঁকির বাইরে নয়। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারী-পুরুষের নৈতিক শিক্ষা, ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান অনুশীলন প্রয়োজন। নারী-পুরুষের সম্পর্ক সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন নরনারী একে অন্যের বন্ধু, এরা সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎকাজে নিষেধ করে, সালাত কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে।’ (সুরা তওবা, আয়াত-৭১)

লেখক : ইসলামিক কলামিস্ট

 

Wordbridge School
Link copied!