• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

ভিয়েতনামের উত্থান-এলডিসি থেকে উত্তরণ

চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক শিল্প


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০২১, ০৩:৪৪ পিএম
চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক শিল্প

ঢাকা : করোনা মহামারীর কারণে সংকটে রয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। পশ্চিমা ক্রেতাদের অনেকে দেউলিয়া এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে এই সংকটের সৃষ্টি। সরকারের ভিশন-২০২১ এর সাথে মিল রেখে পোশাক শিল্পেও ২০২১ সাল নাগাদ ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বিজিএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ২৭ হাজার ৪৭০ মিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ ৫০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কমেছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় রপ্তানি।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখনো চলছে লকডাউন পরিস্থিতি। এসব কারণে উদ্বেগ জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক।

গত ৭ জানুয়ারি গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে চলমান করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে পোশাক খাতে সৃষ্ট সংকট নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা ফেরত না দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায়, পশ্চিমা ক্রেতাদের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া, নির্দয়ভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজার্স ক্লোজেজের কারণে এই শিল্প চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে।’

কিন্তু করোনাকালীন এই পরিস্থিতির চেয়েও আগামী দিনে পোশাক শিল্পের জন্য যে চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে তা হলো পোশাক খাতে ভিয়েতনামের উত্থান। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সঙ্গে চীনের যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তা থেকে বাংলাদেশ উপকৃত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ঘটেনি। সেই সুযোগটি গ্রহণ করেছে অন্য দেশগুলো।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭ শতাংশ পোশাক রপ্তানির আদেশ পেয়েছে ভিয়েতনাম। এরপর তুরস্ক ১০ দশমিক ২ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৮ দশমিক ২ শতাংশ, চীন ৪ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ পোশাক রপ্তানির আদেশ।  

সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নানা কারণে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশটি তাদের মুদ্রা ডমের অবমূল্যায়নের সুবিধা পেয়েছে। তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করায় বাংলাদেশ বর্তমানে ইইউ থেকে যেসব সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো তারা পাবে।’

দেশটি চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডসহ ১৫টি দেশ নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি ‘রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ’-এর সদস্য হওয়ায় এসব দেশ থেকে বড় ধরনের বাণিজ্য সুবিধা পাবে। ফলে ভবিষ্যতে দেশগুলোতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানির সুযোগ হারাতে পারে বলে শঙ্কা করছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান।

এদিকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্র্যাজুয়েশন পেয়ে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে ২০১৮ সালে। কিন্তু এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ এতদিন যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিল, ভবিষ্যতে সেসব সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ।

আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের পর যেসব দেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত, তা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করার কারণে স্বাভাবিকভাবে পোশাকের দামও বৃদ্ধি পাবে।

এছাড়া এর মধ্যে বাড়বে শ্রমিকের বেতন-ভাতাও। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকাটাও চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন মুস্তাফিজুর রহমান। শ্রমমূল্য কম হওয়ায় কিছুটা কমদামেই আমদানিকারক দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনে থাকেন।

কিন্তু পোশাকের দাম বেড়ে গেলে সেসব দেশ হয়তো বিকল্প বাজার খুঁজবে; যদিও বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি-সিডিপি’র নিয়ম অনুসারে, একটি দেশ গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তির জন্য প্রস্তাবিত হওয়ার পরে ৩-৫ বছরের প্রস্তুতিকালীন সময় উপভোগ করতে পারে।

আগামী মাসে ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা চলাকালীন সিডিপির সুপারিশের পরে বাংলাদেশ যদি স্নাতকের জন্য পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকালীন মেয়াদ পায়, তবে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে হলে সরকারকে পোশাক শিল্পের প্রণোদনা সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলো থেকে সহায়তা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি মুদ্রানীতি সহজ সংশোধন করার পরামর্শ দেন। একইসাথে বন্দরে যেসব জটিলতা রয়েছে সেগুলোর দ্রুত সমাধান করতে হবে। সাড়ে ৩ মিলিয়ন কর্মসংস্থান এবং দেশের বৃহৎ রপ্তানি খাতকে ধরে রাখতে হলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেন মুস্তাফিজুর রহমান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!