• ঢাকা
  • বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নদীশাসন কাজে ধীরগতি!


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ২৭, ২০২১, ০১:০৮ পিএম
নদীশাসন কাজে ধীরগতি!

ঢাকা : গত ২৩ আগস্ট শেষ রোড স্ল্যাবটি বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মার মূল সেতুর ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। এখন শুধু বাকি পিচ ঢালাইসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ, যা সম্পন্ন করতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে শেষ হয়েছে পদ্মা রেল সেতুর রোড স্ল্যাব বসানোর কাজ। তবে প্রকল্পের নদীশাসন কাজ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীশাসনের এখনো প্রায় ১৬ শতাংশ বাকি। যে কারণে সেতুর সার্বিক কাজের অগ্রগতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। নদীশাসন কাজে পিছিয়ে পড়ায় প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পে যেসব কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে অন্যতম নদীশাসন। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর পাড় বাঁধাই, কংক্রিটের ব্লক, পাথর ও জিও ব্যাগ ফেলা, নদী খননসহ বহুমাত্রিক কাজ করা হচ্ছে নদীশাসনের জন্য।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে দেড় কিলোমিটার ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ করছে চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো। তবে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামের আশা, আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই নদীশাসনের বাকি কাজটুকু সম্পন্ন হবে।

তিনি বলেন, ‘ সেতুর অন্যান্য কাজ বেশ অগ্রগতি হলেও নদীশাসনের কাজ কিছুটা কম। নদীশাসন মেইন একটি কম্পোনেন্ট। প্রায় ১০ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা মোট কাজের প্রায় ৮৪ শতাংশ। আশা করছি, আগামী বছর জুনের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন হবে।’  

নদীশাসনের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে বেশ কয়েকবার ফেরি ধাক্কা দেওয়ায়। ফেরির ধাক্কা থেকে সেতু রক্ষায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট কিংবা মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ফেরির ধাক্কার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।

তবে সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, ঘাট স্থানান্তর করে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় সরানো হলে সেখানে নদীশাসন কাজের ক্ষতি হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলমান বর্ষা মৌসুমের জন্য মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর নদীশাসন কাজ বন্ধ আছে। ধারণা করা যাচ্ছে, দুই মাস পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শুকনো মৌসুমে নদী শাসনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু পদ্মা সেতুর আওতাধীন এলাকায় শিমুলিয়া ঘাট স্থানান্তর করা হলে, তখন নদীশাসন কাজের ক্ষতি হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘাট স্থানান্তর কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে। অথচ এই সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। সে হিসাবে ঘাট স্থানান্তর কাজ শেষ হওয়ার আগেই, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) মো. শরফুল ইসলাম সরকার জানান, মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাট এলাকাটি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের। চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রোকে নদীশাসনের জন্য এলাকাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করে তারপর পদ্মা সেতুকে বুঝিয়ে দেবে।

তিনি আরো জানান, ঘাট স্থানান্তরের ফলে ওই অংশে নদীতে ফেরি চলাচলের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বার্জ, ড্রেজারসহ মালামাল বহন করে চলাচল করতে পারবে না। এছাড়া, যদি নদী ভাঙন শুরু হয় তাহলে মাওয়া প্রান্তে আরো ঝুঁকি তৈরি হবে।

মো. শরফুল ইসলাম সরকার আরো জানান, ঘাট স্থানান্তর একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। এর জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, বালু ভরাটসহ বেশ কিছু কাজ করতে হয়। ঘাট স্থানান্তরের কাজ শেষ করতে করতে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ফেরির ধাক্কা থেকে পিলারকে বাঁচাতে যেসব সুপারিশ নেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে চলমান বর্ষা মৌসুমে সতর্কভাবে ফেরি পরিচালনা করা বেশি কার্যকর হবে। অন্যদিকে যেহেতু পদ্মা সেতু শিগগির চালু হতে যাচ্ছে, তাই নতুন করে ঘাট স্থানান্তর করা বিপুল অর্থের অপচয় ছাড়া কোন স্বার্থ উদ্ধার হবে না বলে জানান তারা।

এদিকে নদীশাসন বাদে পদ্মা সেতুতে এখন যেসব কাজ বাকি রয়েছে তা হলো-প্যারাপেট ওয়াল বা রেলিং নির্মাণ, রেলের ট্র্যাক নির্মাণ, পেভমেন্টের লেয়ার, রোডমার্চিং, রোড সিগন্যাল, স্ট্রিট লাইট, ফাইবার অপটিক্যাল লাইন, গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন এবং ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইনসহ ছোটখাটো বেশকিছু কাজ।

তবে এসবের বেশিরভাগ কাজই চলমান রয়েছে বলে জানান, প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রোড ব্রিজে পেরাপেট ওয়াল বা রেলিং এর কাজ ৪৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। তবে বর্ষার কারণে পেভমেন্টের লেয়ারের কাজ বন্ধ আছে। বর্ষা শেষ হলে অক্টোবরের দিকে কাজ শুরু হবে।

এরপর রোডমার্চিং, রোড সিগন্যাল, স্ট্রিট লাইটের কাজ বাকি আছে। তবে এগুলোর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে। এগুলো ধাপে ধাপে করা হবে। আশা করছি, সবগুলো কাজ জুনের আগেই শেষ হবে।’

এদিকে সড়ক সেতুর পাশাপাশি পদ্মাসেতুর রেল সেতুও একইদিনে উদ্বোধন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সেতুর ওপর রেললাইন বসানোর কাজ শুরুর আগে জটিলতা দেখা দেয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, পুরো রেললাইন বসাতে সময় লাগবে কমপক্ষে ছয় মাস। যদি নির্দিষ্ট সময়ে রেলপথ চালু করতে হয়, তাহলে সেতু কর্তৃপক্ষকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রেলপথের অংশটুকু রেল মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবে মূল পদ্মা সেতুর কাজ আগামী জুনের আগে শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

এমন পরিস্থিতিতে মার্চের আগে রেলপথের অংশ রেল মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেবে না সেতু কর্তৃপক্ষ। ফলে আগামী বছরের জুনে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হলেও ট্রেন চলতে অপেক্ষা করতে হতে পারে আরো কিছুটা সময়।

যদিও সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলছেন, একই সঙ্গে যাতে সড়ক ও রেলপথ চালু হয় সেজন্য উভয়পক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!