• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
সার্জিক্যাল মাস্ক বেশি কার্যকর : গবেষণা

মাস্ক ব্যবহারে অনীহা নির্বিকার প্রশাসন


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১, ০৮:৩৩ পিএম
মাস্ক ব্যবহারে অনীহা নির্বিকার প্রশাসন

ঢাকা : রাস্তাঘাট, অলিগলি বা গণপরিবহন সবখানেই কমে গেছে মাস্কের ব্যবহার। মাস্ক ব্যবহার নিয়ে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশের মাঝেই উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। অথচ নির্বিকার প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টরা। 

জনগণকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও নানা উদ্যোগ নিয়েছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও দেখা মিলছে না। এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে সতর্ক বার্তাটাও দেওয়া হচ্ছে না জনগণের উদ্দেশ্যে।

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারে শিথিলতা নমনীয় মনে হচ্ছে। এমনকি কাউকে মাস্ক বিষয়ে বলা হলেও তৈরি হচ্ছে বািবতণ্ডা।

মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি অনীহা দেখা যাচ্ছে নিম্নবিত্ত এবং কম শিক্ষিত মানুষের মাঝে। যাদের মধ্যে রয়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে রিকশাচালক, দোকানদার এবং কিশোর-তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশিরভাগই সচেতনভাবে মাস্ক ব্যবহার করছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সরকারের ত্রুটিপূর্ণ ভূমিকাকে দায়ী করে বলছেন, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় করোনা মোকাবিলায় যে আত্মতুষ্টির কথা গণমাধ্যমে প্রচার করছেন, এর ফলে সাধারণ জনগণের মাঝেও মাস্ক ব্যবহারে গা-ছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে। 

তাদের মতে, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যখন ঘটা করে করোনা মোকাবিলায় সফলতার ঘোষণা দেন, তখন মনস্তাত্ত্বিক কারণে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা সৃষ্টি হয়। 

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা, বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে যেহেতু ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা রয়েছে, এ কারণে কেবলমাত্র মাস্কই পারে আমাদের করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে। 

এমনকি যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন তাদেরও সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কারণ মাস্কের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের মন্ত্রী ইতোমধ্যে বলা শুরু করেছেন করোনা মোকাবিলায় আমরা ভালো করেছি। 

তাদের এই বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, মাস্ক ছাড়াই যদি ভালো করা যায় তাহলে মাস্ক ছাড়াই চলতে পারি। এ ধরনের কথাবার্তা মাস্ক ব্যবহারের অন্তরায়।’

এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এই সময়টাতে মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। তার মতে, মাস্ক ব্যবহারে সরকারকে শহরভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। 

অর্থাৎ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহরের মানুষ যাতে মাস্ক ব্যবহার করে সে বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ডা. বে-নজির আহমেদ।

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাপড়ের মাস্কের বদলে সার্জিক্যাল মাস্ক সার্বিকভাবে ১১ শতাংশ সংক্রমণ কমতে দেখা গেছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে সংক্রমণ কমে ২৩ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে কমে ৩৫ শতাংশ। 

ইয়েল, স্ট্যানফোর্ড এবং বাংলাদেশি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রিনভয়েসের কয়েকজন গবেষক পরিচালিত সমীক্ষা এমন চিত্র উঠে এসেছে। এ গবেষণার প্রধান পরিচালনাকারীরা হলেন অ্যাবালাক, লরা ক্যোং, স্টিভ লুবি, আহমেদ মুশফিক মোবারক এবং অ্যাশলে স্টাইজিনস্কি।

গবেষণায় বলা হয়, সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যাপক ব্যবহার একটি সম্প্রদায়ের করোনাভাইরাসের বিস্তারকে সীমিত রাখতে পারে। বাংলাদেশের ৬০০টি গ্রামের ৩ লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে এই সমীক্ষা (পরীক্ষামূলক) চালানো হয়। গত বছরের নভেম্বরে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক এই গবেষণা শেষ হয় চলতি বছরের এপ্রিলে। 

গবেষণা প্রকল্পে মসজিদ, বাজার এবং অন্যান্য গণজমায়েত স্থানে সাধারণ লোকদেরকে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মাস্ক ব্যবহার এবং শারীরিক দূরত্বের মাত্রা মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এ কাজে অংশগ্রহণকারীদের প্রথমত দুভাগে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার গ্রামবাসী ছিলেন ইন্টারভেনশন গ্রুপে এবং এক লাখ ৬৩ হাজার গ্রামবাসী ছিলেন কন্ট্রোল গ্রুপে। 

গবেষকেরা লক্ষ্য করেন, ইন্টারভেনশন গ্রুপের লোকদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের হার ১৩ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশে যেয়ে পৌঁছায়। এছাড়া, মাস্ক ব্যবহারের এ হার একাধারে ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল, এবং ইন্টারভেনশন শেষ হওয়ার পরেও অব্যাহত ছিল।

গবেষণার প্রথম ধাপে গবেষকরা লক্ষ করেন, মাস্ক ব্যবহার বাড়াতে মূলত চারটি বিষয় দায়ী। বিষয়গুলো হলো-বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ, মাস্কের ব্যবহার বিষয়ে তথ্য প্রদান, ব্যক্তিগতভাবে এবং জনসমক্ষে মাস্ক ব্যবহারে জোর দেওয়া এবং বিশ্বস্ত নেতাদের অনুমোদন ও মডেলিং।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে গবেষকরা কোভিডের উপসর্গের হার পরীক্ষার জন্য দুটি দলে ভাগ করা গ্রামগুলো পরীক্ষা করেন। 

তারা জানান, যেসব গ্রামে মাস্ক ব্যবহারের প্রচার কর্মসূচি চালানো হয়েছিল (ইন্টারভেনশন গ্রুপ), সেখানে অন্যান্য গ্রামের তুলনায় সংক্রমণের হার ছিল ৯.৩ শতাংশ কম। 

এ ছাড়া কাপড়ের মাস্কের বদলে সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হলে, সার্বিকভাবে সংক্রমণ কমতে দেখা যায় ১১ শতাংশ। সেই সাথে সংক্রমণ কমার এ হার ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের মধ্যে কমে ২৩ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে কমে ৩৫ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!