• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা ইস্যুতে অনড় বিএনপি, কঠোর আ.লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৯, ২০২১, ০৯:২৯ পিএম
খালেদা ইস্যুতে অনড় বিএনপি, কঠোর আ.লীগ

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।ফাইল ছবি:

ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে দলটি।একদিকে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচি অন্যদিকে নেত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করে যাচ্ছে বিএনপি। 

সর্বশেষ খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় বিএনপির গঠন করা মেডিকেল বোর্ডের প্রধান প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিকী।

আরও পড়ুন: খালেদায় উত্তাল রাজপথ, ভয় পায় না আ.লীগ

তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার এই রোগের উন্নত চিকিৎসা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানিতে সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেত্রীর যকৃত বা লিভারে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। একবার এই রক্তক্ষরণ সামাল দেয়া গেছে। তবে এখন তার যে অবস্থা, সেটি দ্বিতীয়বার সামাল দেয়া কঠিন হবে।বাংলাদেশে দুই থেকে তিন বার রক্তক্ষরণ সামাল দেয়ার কারিগরি সুযোগ নেই দাবি করে যত দ্রুত সম্ভব তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান।

চিকিৎসকদের এমন বক্তব্যের পর এই ইস্যুটি আরও জোড়ালো হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন আগের মতো কঠোর অবস্থানেই। 

আরও পড়ুন: জোড়াতালির জোট...

আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে চাইলে আইনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।তিনি এখন যে শর্তে কারামুক্ত রয়েছেন তাতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। পাশাপাশি বাংলাদেশে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে এবং খালেদা জিয়া চাইলে বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করাতে পারেন।

একইসঙ্গে এই ইস্যুতে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করার কথাও বলা হচ্ছে জোড় গলায়।

আরও পড়ুন: দু’দলেই তৃণমূলে অসন্তোষ

বিএনপি কঠোর কর্মসূচি ও এমপিদের পদত্যাগের হুমকি এবং দলীয় হাইকমান্ডের আন্দোলনে নামার হুমকি আমলে নিচ্ছে না সরকার ও প্রশাসন। খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপি যে দাবি করছে, তা আইনের বইয়ে নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। প্রয়োজনে বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলা করা হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।

আরও পড়ুন: নতুন দলে কৌতুহলী মানুষ, সময় বলবে কে কেমন
 
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির পর আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে গত ২৪ নেভেম্বর থেকে পুলিশের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
 
এদিকে সম্প্রতি এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরোনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার সময় স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল কিনা।

আরও পড়ুন: যতটুকুতে হুমকি নেই ততটুকু আন্দোলন...

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দরকার। একথা চিকিৎসকেরা বার বার বলছেন। তারা বলছেন আমাদের এখানে আর চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কিন্তু হাসিনা শুনতে চায় না। তার মন্ত্রীরাও বলে দেওয়া উচিত, আওয়ামী লীগের এমপিরাও বলে এটা মানবিক কারণে দেওয়া উচিত। সারা দেশের সব মানুষ, ডাক্তার, উকিল, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপকেরা বলছেন, কিন্তু তিনি এটা শুনতে চান না। কেন চান না, তার প্রতিহিংসা। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে শুধু নয়, এখন জীবন থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এই চক্রান্ত।

আরও পড়ুন: পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে বিএনপি
 
তিনি বলেন, আজকে দেশনেত্রী হাসপাতালে তার জীবন নিয়ে লড়াই করছেন। আমরা কি ঘরে বসে থাকবো। আমরা ঘরে বসে থাকবো না। আমরা প্রাণপণ আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাকে মুক্ত করার জন্য সর্বো শক্তি দিয়ে  আন্দোলনে নামবো।   

তবে খালেদা জিয়াকে সরকার স্লো পয়জনিং করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন- সরকার নয়, খালেদা জিয়ার কিছু হলে বরং বিএনপিকেই তার দায় নিতে হবে। বেগম জিয়ার পাশে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ বা সরকারের কেউ বেগম জিয়ার পাশে থাকেন না। ব্যক্তিগত পছন্দের চিকিৎসকরাই তাকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। তার চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন। খালেদা জিয়ার আশপাশের লোকেরা হচ্ছেন বিএনপির লোকেরা, তার পরিবারের লোকেরা, স্লো পয়জনিং যদি করে থাকে আপনারা পাশের লোকেরাই করতে পারেন। হুকুমের আসামি শেখ হাসিনা হবে না, সেটি হলে ফখরুল সাহেব আপনি হবেন।

আরও পড়ুন: আন্দোলনের রূপরেখা সাজিয়ে ফেলেছে বিএনপি

ওবায়দুল কাদের বলেন, কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিহত করবে। খালেদার চিকিৎসা ইস্যুতে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক রয়েছেন।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেগম জিয়া খুব হাইরিস্কে আছেন। খালেদা জিয়া যেখানে ভর্তি হয়েছেন সিসিইউতে, এটা মূলত করোনারি কেয়ার ইউনিট না। দিস ইজ ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট। বিনা চিকিৎসায় তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনকে চাপ তৈরি করতে হবে। তা না হলে যে কোনো পরিস্থিতির দায় সরকারকেই নিতে হবে।

আরও পড়ুন: হাকডাক দিচ্ছে বিএনপি, পাত্তা দিচ্ছে না আ.লীগ 

তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন তার স্বাস্থ্যের কোনো সুখবর দিতে পারেননি। যে চিকিৎসা এখানে হচ্ছে, এটি কোনো চিকিৎসাই না। বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে এই রোগীকে এভাবে ফেলে রাখতে পারে না। দেশে যথাযথ চিকিৎসা হলে সরকারি দলের নেতারা কেন বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি ও দলটির নেতাদের একের পর এক বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের সমালোচনা করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন- বিএনপির দায়িত্ব ছিল, হাসপাতালের দায়িত্ব ছিল এ ধরনের ব্যক্তির প্রতিদিনের স্বাস্থ্য নিয়ে বুলেটিন প্রকাশ করা। কিন্তু তা তারা করতে পরেনি।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে

তিনি বলেন, আমরা কয়েকদিন আগে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। যা দেখেছি সামপ্রতিককালে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি। খালেদা জিয়া কতক্ষণ, কয় মিনিট, কয় দিন বাঁচবেন সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে এটা বলতে পারি খালেদা জিয়া চরম ক্রান্তিকালে আছেন। তাই সরকারকে আমি অনুরোধ করব, মানবিক দিক বিবেচনায় হলেও ওনাকে দ্রুত বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া উচিত। আর না হলে যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। মানবিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে সাজা স্থগিত রেখে ছয় মাস পরে বাড়ানো হয়েছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমি তা দেখিয়েছি যে বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই। উনারা যদি এটা দেখাতে পারেন, তাহলে তো আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই। উনারাও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্ন আসে না। খালেদা জিয়াকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে আনিসুল হক বলেন, একজন সাজাপ্রাপ্ত ৪০১ ধারায় কোনো সুযোগ নেই নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবার বিবেচনা করার।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!