• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এসপি হারুনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে নারায়নগঞ্জের জনসাধারণ


নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি নভেম্বর ১১, ২০১৯, ১২:৪৪ পিএম
এসপি হারুনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে নারায়নগঞ্জের জনসাধারণ

নারায়নগঞ্জ: আলোচিত সমালোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশিদ কে নারায়নগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়া হয়েছে। নারায়নগঞ্জ থেকে তাকে বদলি করার পর জেলার জনসাধারণ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। তাদের মতে ‘পাপ বাপকে ছাড়ে না’। শুধুমাত্র কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার নেশায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এসপি হারুন। টাকার জন্য এমন কিছু নেই যা তিনি করেননি।

সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও বোকা বানিয়েছেন তিনি। আর এভাবে তিনি নিজের ফায়দা হাসিল করেছেন। অঢেল অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যাওয়া এই পুলিশ কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জে এতটাই ক্ষমতাধর ছিলেন মন্ত্রী-এমপিদেরও কোনো পাত্তাই দিতেন না। রীতিমতো কোনো প্রটোকল মেইনটেন পর্যন্ত করেন নি তিনি। এ নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও যেন কিছুই করার ছিল না তাদের।

এদিকে, সাধারণ ব্যবসায়ী তো দূরের কথা জেলার প্রভাবশালী শীর্ষ ব্যবসায়ীরাও এসপি হারুনের রোষানল থেকে রেহাই পায়নি। নাজেহাল হয়েছেন অনেকে। লোক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকেই মুখ খোলেন নি। নীরবে এসপি হারুনের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে গেছেন তারা। এ ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরও তাকে অর্থ দিয়ে এলাকায় থাকতে হয়েছে। দুঃখ করে অনেকেই এ প্রতিবেদককে বলেছেন, নিজের দল ক্ষমতায়। অথচ এসপি হারুনকে মাসোহারা দিয়ে এলাকায় থাকতে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, দাবিকৃত টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানির হুমকি দেয়া হতো। ফলে আমরা নিরূপায় ছিলাম। কিন্তু সব কিছুর একটা শেষ আছে তা প্রমাণিত হয়েছে তার বদলির মধ্য দিয়ে।

অভিযোগ রয়েছে, গাজীপুর থাকতেই এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জের অনেক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতার তালিকা করেন এবং কার থেকে কিভাবে অর্থ আদায় করবেন তারও একটা ছক করেন। নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর শুরু হয় তার টাকা কামানোর মিশন। 

এই কাজে তিনি সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে ব্যবহার করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। তার নির্দেশে প্রতি রাতে ডিবির একাধিক টিম কালো গ্লাসের হাইয়েস গাড়ি নিয়ে নেমে পড়তো ‘শিকার’ ধরতে। গাড়িতে মজুত থাকতো ইয়াবা, অস্ত্র ও বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। সুযোগ বুঝে ওই সব জিনিস দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া হতো নিরপরাধ ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও ধনীর দুলালীদের। যদিও ৬ই অক্টোবর এসপি হারুনের অপকর্মের অন্যতম সহযোগী ডিবির ওসি এনামুল হককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয় পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এক আদেশে।

এক পর্যায়ে এসপি হারুন নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য এনামুল হককে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বদলি করা হয়েছে বলে স্থানীয় মিডিয়ায় প্রচার করান। মজার বিষয় হলো, প্রকাশ্যে এসপি হারুন বলতেন এক আর করতেন আরেক। দিনের বেলা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে বলতেন, মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, গডফাদার, সন্ত্রাসী-মাস্তানদের রক্ষা নাই। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আর রাতের বেলা চিহ্নিত বড় বড় অপরাধীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যারা টাকা দিতে রাজি হয়নি তাদের মাদক দিয়ে গ্রেপ্তার করে মিডিয়ায় বাহাবা নিয়েছেন।

শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত ও আলোচিত এসপি হারুনকে মাত্র ১১ মাসের মাথায় রোববার নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে (ট্রেনিং রিজার্ভ) সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বস্তি দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জে।

নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
সূত্রমতে, পুলিশ সুপার হারুন রশিদ ২০১৮ সালের ২রা ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের এসপি হিসেবে দায়িত্ব নেন। আতঙ্ক দেখা দেয় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে। কারণ গাজীপুরে থাকাকালীন এসপি হারুনের কর্মকাণ্ড নারায়ণগঞ্জবাসী ভালো করেই জানতো। তবে এসপি হারুন বিভিন্ন সভায় ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি অপরাধীদের জন্য আতঙ্ক, সাধারণের বন্ধু। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জবাসী জেনে যায় এটা তার উপরের কথা। ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেই তিনি সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের উপর চড়াও হন। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অনেককে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে এসে গ্রেপ্তার অথবা ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন। দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুদ্ধে পুলিশ দিয়ে ফতুল্লা ও সদর মডেল থানায় দু’টি সাধারণ ডায়েরি করিয়েছিলেন তিনি। জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলা মিটিয়ে দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া যোগদানের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে তার দপ্তরে ডেকে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে শুরু করেন এসপি হারুন। ২রা এপ্রিল ফতুল্লার পাগলায় ভাসমান রেস্টুরেন্ট ও বার ‘মেরি এন্ডারসন’ এ এসপি হারুনের নির্দেশ অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ২৫ জন স্টাফ ও ৪৩ জন মাদকসেবীকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক মাদক দ্রব্য। কিন্তু ঘটনায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী তানভীর আহমেদ টিটুকে জড়ানোর চেষ্টা করে এসপি হারুন। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ দেখা দেয় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মহলে। এক পর্যায়ে ‘দেখা করার দিন শেষ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ স্লোগানকে সামনে নিয়ে টিটুকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সভা করেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী সংগঠন। এরপর কৌশল পাল্টান এসপি হারুন। এসপি হারুনের আর্থিক হয়রানির শিকার হয়েছেন নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, নাসিক প্যানেল মেয়র-২ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক, জাপা নেতা জয়নাল আবেদীনসহ ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।

তবে সবশেষ গত মাসের ২, ৩ ও ৪ঠা অক্টোবর এসপি হারুনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের ধারাবাহিক ৩টি অভিযান ছিল সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। প্রথম অভিযানটি হয় গত ২রা অক্টোবর রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার রসূলপুর এলাকায়। ওইদিন রাতে ডিবি পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে দেশের স্বনামধন্য মাস্টার কয়েল ফ্যাক্টরির মালিক জামাল হোসেন মৃধার বাড়িতে অভিযান চালায়। পুলিশের দাবি তার বাড়ি থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা এবং নগদ ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় জামাল হোসেন মৃধা, তার সহযোগী মোস্তফা কামাল ও মানিক মিয়াকে। জামাল মৃধার ৩টি মশার কয়েল তৈরির ফ্যাক্টরি রয়েছে। এ ছাড়া তার একটি গরুর খামারও রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর জামাল মৃধা ও তার সঙ্গে গ্রেপ্তাররা এখনো নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

জামাল মৃধার পরিবার এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি তিনি ধর্মপ্রাণ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। মাদকের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত মাস্টার মশার কয়েল দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। তাছাড়া তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত গরুর খামারিও।

জামাল মৃধার বড় ভাই লাভলু মৃধা বলেন, বাড়ি থেকে সোয়া ৩ কোটি টাকা ছিল। পুলিশ দেখিয়েছে সোয়া ১ কোটি টাকা। আর ইয়াবার বিষয়টি পুলিশের সাজানো। এত টাকা সেদিন বাড়িতে ছিল কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গেল কোরবানির ঈদে খামারের গরু বিক্রির টাকা ছিল বাসায়। এ ছাড়া কারখানার মালামাল ক্রয়ের জন্য বাসায় টাকা রাখা হতো। কিন্তু তার ভাই মাদকের সঙ্গে জড়িত এ কথা পরিবারের কেউ তো নয়ই বরং এলাকারও কেউ বিশ্বাস করেনি। সবকিছুই ছিল পুলিশের সাজানো।

জামাল মৃধার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, পুলিশের তদন্তে প্রকৃত সত্য উঠে আসবে বলে আমরা মনি করি। তার মক্কেলকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সামাজিকভাবে ব্যবসা করে সুপ্রতিষ্ঠিত সেই ব্যক্তি কেন মাদক ব্যবসার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হবে।

অপর দিকে এ ঘটনার পর দিন ৩রা অক্টোবর ডিবি পুলিশের একই টিম সিদ্ধিরগঞ্জে ম্যাক্স ইলেক্ট্রা ইন্ডাস্ট্রিজে হানা দেয়। তারা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ জন শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই প্রতিষ্ঠানে অবৈধ ও নকল পণ্য সামগ্রী মজুত রয়েছে।

ম্যাক্স ইলেক্ট্রার মালিক বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সেদিন পুলিশ সুপার অন্যায়ভাবে তার প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে তার ৮ জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং তার প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ পুলিশের কাছে দেন। গতকাল পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান পুলিশের হেফাজতে ছিল বলে তিনি জানান। প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তারকৃতরা গতকাল আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন বলে তিনি জানান। এ ব্যবসায়ী আরো জানান, পুলিশ তার প্রতিষ্ঠানে অভিযানের সময় নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক গোয়েন্দা ও এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নেয়নি। অন্যায় ভাবে আমার প্রতিষ্ঠানে সেদিন হানা দেয়া হয়েছিল। অথচ আমার প্রতিষ্ঠানের পাশেই শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয় অবস্থিত। আমি ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করেই ব্যবসা করছি। ঘটনার সময় পুলিশ সুপারকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানে থাকা মালামালের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও তিনি তা দেখেননি। উল্টো টেলিফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমার কাছে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দাবি করেন। তার দাবি না মেটানোয় এখনো আমার প্রতিষ্ঠান পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ব্যবসায়ীর ধারণা পুলিশ তার প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক্স ও প্রসাধনী সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি অবমুক্ত হওয়ার পর এ বিষয়টি জানা যাবে বলে তিনি বলেন।

এসপি হারুনের তৃতীয় বিতর্কিত অভিযান ছিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত ইউনাইটেড ক্লাবে অভিযান। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া ওই ক্লাবে কোনো ধরনের কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ড হয়নি। পুলিশও অভিযানের সময় ক্লাব থেকে কোনো অবৈধ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। অভিযানে ক্লাবে থাকা ক্লাবটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তাপুসহ ৭ জন বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের মধ্যে একজন ব্যাংক কর্মকর্তাও ছিলেন। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের জুয়া আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালতে ২০০ টাকা মুচলেকায় তারা জামিন পান।

ক্লাবটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তাপু বলেন, ঘটনার পর তিনি তার সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে পারেন না। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তিনিসহ তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা সামাজিকভাবে মারাত্মক হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। যা কোনো দিন ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ক্লাব মানেই খারাপ কিছু নয়। এই ক্লাবের সব সদস্য সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, ওই ৭ জনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায়ের পরেই তাদের জুয়া আইনে আদালতে চালান দেয়া হয়। যাতে তারা সহজেই জামিন পেতে পারেন।

যে ঘটনায় আটকে গেলেন এসপি হারুন
নানা ঘটনার পর শুক্রবার আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও গুলশান ক্লাবের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী-পুত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরদিন শনিবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসপি হারুন দাবি করেন, শওকত আজিজের গাড়ি থেকে ২৮টি গুলি, ১ হাজার ২০০ ইয়াবা, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ৪৮ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সময় গাড়িতে শওকতের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও সন্তান আনাব আজিজ ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এম এ হাসেম সহযোগিতা করবেন বলে মুচলেকা দেয়ায় তার স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় শওকত আজিজ বলেন, চাঁদা নিয়ে হারুন অর রশীদের সঙ্গে তার পুরনো বিরোধ ছিল। সমপ্রতি তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন। সেখানেও হারুন বাগড়া দিচ্ছিলেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তিনি তার স্ত্রী-পুত্রকে একটি পার্টিতে নামিয়ে ঢাকা ক্লাবে আসেন। ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখেন তার গাড়িটি নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গাড়ি আছে নারায়ণগঞ্জে। পরদিন রাতে তার অনুপস্থিতিতে এসপি হারুন একদল পুলিশ নিয়ে তার গুলশানের বাসায় ঢুকে ভাঙচুর করেন। এরপর তার স্ত্রী-সন্তানকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যান। এ বিষয়ে নিকটস্থ গুলশান থানাকে কিছু জানায়নি নারায়ণগঞ্জের পুলিশ। পরদিন তার খোয়া যাওয়া গাড়িতে ইয়াবা, মদ ও গুলি উদ্ধারের ঘটনা সাজিয়ে তার ও তার গাড়িচালকের নামে মামলা করেন। গুলশানের বাসা থেকে স্ত্রী-সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও শওকত তার ফেসবুকে শেয়ার করেন।

শওকত আজিজ বলেন, এসপি হারুনের চাঁদাবাজি নিয়ে ২০১৬ সালের ৫ই মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের আদেশে গাজীপুর থেকে প্রত্যাহারের পর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তার কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার পক্ষে উপ-পরিদর্শক আজহারুল ইসলাম আম্বার ডেনিমের স্টোর ম্যানেজার ইয়াহিয়া বাবুকে ফোন করে টাকা দাবি করেন। এর আগেও গুলশান ক্লাবের লামডা হলে ও গুলশানের কাবাব ফ্যাক্টরি রেস্তরাঁয় এসপি হারুন তাকে ডেকে নিয়ে ৫ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঠিকানায় পাঠাতে বলেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আম্বার ডেনিমের ৪৫ জন শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গাজীপুর থানায় ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়।

এদিকে, শুক্রবার রাতের ঘটনায় দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী মহলে তোলপাড় শুরু হয়। এবং বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে আনা হয় রোববার দুপুরে। এরপরই বিকালে এসপি হারুনকে নারায়ণগঞ্জ থেকে বদলির আদেশ আসে বলে সূত্র জানায়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!