মাকে ছাড়া আজ বাসায় যাব না

ঢাকা: মাত্র ৫ বছর বয়সের ছোট সানিন। মামার কোলে উঠে শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছে। উদ্দেশ্য চকবাজারের অগ্নিকান্ডে নিহত মাকে খুঁজে বের করা।

হাসপাতালে সিআইডির নমুনা সংগ্রহ ডেস্কে সানিনকে দেখে সবাই ঘিরে দাঁড়ালেন। সবার চোখে মুখে শুধু একটাই প্রশ্ন এতোটুকু বাচ্চাটা তার মাকে হারালো? উপস্থিত সবার ভেজাভেজা চোখ দেখে সানিনও কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। তবে তার নিষ্পাপ চোখে নেই কোন পানি। শরীরে নেই কোন চঞ্চলতা। নিথর পাথরের মতো চোখ দুটিতে একটাই প্রশ্ন আম্মু কই গেল?

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল। এর পর নমুনা সংগ্রহ করে। সানিনকে ভয় পেতে দেখে সিআইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত বলেন, মা তুমি ভয় পেয়ো না। তোমাকে ব্যথা দেব না। শুধু তোমার মুখ থেকে অল্প লালা নেব।

নুসরাতের কথা শুনে সানিন মায়ের মরদেহ শনাক্তকরণের জন্য হা করে লালা দেয়ার জন্য। এ সময় সানিনের মুখ হা করার দৃশ্য দেখে গণমাধ্যমকর্মীসহ অনেকেই কেঁদে ফেলেন। দুই দফায় সানিনের মুখ থেকে লালা সংগ্রহ করে সিআইডি।

নমুনা সংগ্রহের পর সানিন জানায়, তার মা বিবি হালিমার মরদেহ শনাক্তকরণ করতেই হাসপাতালে এসেছে সে। তার মা ঔষধ কিনতে বাসার বাহিরে এসেছিলো আর ঘরে ফেরেনি।

সানিনের মা রাজধানীর চকবাজারের আগুনের ঘটনায় বিবি ফাতেমা উরুফে সানিনের মা বিবি হালিমা উরুফে শীলা (২২) নিখোঁজ রয়েছেন। পরিবারের সন্দেহ, বিবি হালিমা অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। তাই শীলার মরদেহ খুঁজে পেতে পাঁচ বছরের শিশুকন্যা সানিনকে নিয়ে মর্গে এসেছেন তার স্বামী মো.সুমন রহমান।

সুমন-শীলা দম্পতির বিবি ফাতেমা নামে পাঁচ মাসের আরেকটি শিশু বাচ্চা রয়েছে। মো.সুমন রহমান বলেন, ওয়াহিদ ম্যানশনের সামনে একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গিয়ে শীলা আর ফিরে আসনি। তাই মর্গে এসে ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা দিলাম।

এ সময় তিনি বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমার এই দুই শিশুর কী হবে। তাদের মাকে আমি এখন কোথা থেকে এনে দেব।

সানিনের মামা ইসরাফিল বলেন, ‘ঢামেকে আসার পর সানিন আস্তে আস্তে আমাকে বলে, মামা আজ কিন্তু মাকে নিয়ে বাসায় যাব। মাকে ছাড়া আজ বাসায় যাব না’।

তিনি আরো বলেন, ছোট ৫ মাসের বাবুটাও সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। তার খালামনির কাছে ওকে রেখে এসেছি।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম