• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বগির বাস নিয়ে সংকটে বিআরটিসি


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১০, ২০১৬, ০৭:৪১ পিএম
দুই বগির বাস নিয়ে সংকটে বিআরটিসি

এমএ ইউসুফ
আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস নিয়ে নানা সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। ২০১২ সালে কেনা ৫০টি বাসের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৪টি বিকল হয়ে পড়েছে। এখন প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে আর্টিকুলেটেড বাসের জোড়া লাগানো অংশ পুনঃস্থাপনের। তাতে খরচ হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা। কিন্তু বিআরটিসি ওই টাকার সংস্থান করতে পারেনি। অথচ ১ কোটি ১১ লাখ টাকা দরে কেনা প্রতিটি বাসের কেবল জোড়া লাগানো অংশেরই দাম ৩৩ লাখ টাকা। আর উপরের রাবারের দাম ৭ লাখ টাকা। ওসব বাসের মেয়াদ তিন বছর। যা ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে। তারমধ্যে ১৬টি বাসের অবস্থা বেশি নাজুক। ওসব বাসের জোড়া লাগানো অংশগুলো ৬ মাসের মধ্যে পুনঃস্থাপন করতে হবে। তা না হলে একে একে আর্টিকুলেটেড বাসগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। পাশাপাশি এসব বাসের একদিকে যেমন ট্রিপ কম, অন্যদিকে আয়ও কম। এ পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে আর্টিকুলেটেড বাস নিয়ে বিআরটিসি এখন বিপাকে। বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় বিআরটিসির নিজস্ব অর্থায়নে আর্টিকুলেটেড বাসের জোড়া লাগানো অংশগুলো পুনঃস্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে বাস কিনে দিলেও এর যন্ত্রাংশ কেনার অর্থ দিতে সম্মত নয় মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে নিজস্ব আয়ে রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ফলে আর্টিকুলেটেড বাস নিয়ে নানামুখী সমস্যায় পড়েছে বিআরটিসি। ইতোমধ্যে তিন বছর আগে কেনা ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মধ্যে ১৪টিই বিকল হয়ে পড়েছে। ওগুলোকে গাজীপুর ডিপোয় ফেলে রাখা হয়েছে। যদিও বাসগুলোর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১৫ বছর। বিকল বাসগুলোর মধ্যে ১০টি হালকা ও দুটির ভারি মেরামত প্রয়োজন। বাকি দুটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামতে প্রায় ১২ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। তবে পর্যাপ্ত বরাদ্দের অভাবে বাসগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, আর্টিকুলেটেড বাস কেনায় প্রতিটির জন্য ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ভলভোর পর এতো দামি বাস বিআরটিসির বহরে আর নেই। অথচ ওই বাসগুলো থেকে আশানুরূপ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ৫৪ ফুট দীর্ঘ ওই বাসগুলোর বিভিন্ন মোড়ে টার্ন নিতে সমস্যা হয়। তাছাড়া যাত্রী ওঠানামা করানোর জন্য সড়কে লেন পরিবর্তনেও বেশ জটিলতা হয়। এতে মতিঝিল থেকে গাজীপুর পর্যন্ত দিনে সর্বোচ্চ দুটি ট্রিপ দেয়া সম্ভব হয়। আর ট্রিপ কম হওয়ার কারণে ৬ মাসে (মে-অক্টোবর) আর্টিকুলেটেড বাসগুলো পরিচালনায় ৪১ লাখ টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। এসময় বাসগুলো পরিচালনা থেকে আয় হয় দুই কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর ব্যয় ২ কোটি ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তারমধ্যে সেপ্টেম্বরে বাসগুলো পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়। ওই মাসে ব্যয় হয় ৬৪ লাখ ও আয় ২৮ লাখ টাকা। এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে ২০০ আর্টিকুলেটেড বাস কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে বিআরটিসি। বরং তার পরিবর্তে ২০০টি এসি ও ১০০টি নন-এসি একতলা সাধারণ বাস কেনা হবে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির অনুমোদন নিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রস্তাবটি যাবে ভারতের কাছে। দেশটির অনুমোদনের পরই বাসগুলো কেনার প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, আর্টিকুলেটেড বাস কেনার সময় জোড়া লাগানো অংশগুলো পুনঃস্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। তাই কেনা হয়নি খুচরা যন্ত্রাংশের সাথে সেগুলোর অতিরিক্ত কোনো সেটও। ইতোমধ্যে বাসগুলোর জোড়া লাগানোর অংশগুলোর মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে ১৬টি বাসের অবস্থা বেশি খারাপ। দ্রুত সেগুলো পুনঃস্থাপন প্রয়োজন। না হলে বাস বন্ধ রাখতে হবে। বর্তমানে পুরনো আর্টিকুলেটেড বাসগুলো নিয়ে বিআরটিসি নানামুখী সমস্যায় পড়েছে। দৈর্ঘ্যরে কারণে মতিঝিল-গাজীপুর ও মতিঝিল-ক্যান্টনমেন্ট রুট ছাড়া অন্য কোনো রুটে বাসগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বাসগুলোর মেরামত ব্যয়ও অনেক বেশি। সব বিষয় বিবেচনা করেই নতুন ২০০ আর্টিকুলেটেড বাস কেনার প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। বরং তার পরিবর্তে ঢাকা শহরের জন্য ১০০ এসি ও ১০০ নন-এসি এবং দূরপাল্লার জন্য ১০০ এসি বাস কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাতে প্রকল্প ব্যয় না বাড়লেও অধিক যাত্রী সেবা দেয়া সম্ভব।
এদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণে (এলওসি) ৩০০ দ্বিতল ও ২০০ আর্টিকুলেটেড বাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) সই হয়। যদিও এখন আর আর্টিকুলেটেড বাস কেনা হচ্ছে না। তবে দ্বিতল বাস কেনার সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, আর্টিকুলেটেড বাসের জন্য বিশ্বের সব দেশেই পৃথক লেন থাকে। সব ধরনের যানবাহনের সাথে প্রতিযোগিতা করে চলা এসব বাসের পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া ঢাকার সড়কগুলোও এ বাসের জন্য উপযুক্ত নয়। অধিকাংশ সড়কেই টার্ন নেয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে আর্টিকুলেটেড বাস থেকে আয় অনেক কম হয়। আর এ আয় দিয়ে বাসগুলো পরিচালনাই যেখানে সম্ভব নয়, সেখানে মেরামত কীভাবে করা যাবে। তাই একে একে বন্ধ হলেও বাসগুলো চালু করা যায়নি। এর সাথে নতুন যুক্ত হয়েছে জোড়া লাগানো অংশ পুনঃস্থাপনের চাহিদা। এ ব্যাপারে কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।


সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!