• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ

উৎসবমুখর প্রচারণায় প্রার্থীরা


নিউজ ডেস্ক এপ্রিল ২৫, ২০১৮, ১০:৫২ এএম
উৎসবমুখর প্রচারণায় প্রার্থীরা

ঢাকা : খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিভিন্ন পদের প্রার্থীদের মধ্যে মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর পরই মেয়র প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা জমজমাট প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের জনসংযোগ ছিল চোখে পড়ার মতো।

আগামী ১৫ মে এ দুই সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ হবে। মেয়র পদে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে পাঁচজন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (জিসিসি) সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান, কেসিসি নির্বাচনকে ঘিরে নগর জুড়ে চলছে নির্বাচনী আমেজ। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পর মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। শুরু হয়েছে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, মিছিল ও মাইকিংয়ে প্রচার-প্রচারণা। মঙ্গলবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী। কেসিসি নির্বাচনে পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ডে ১৪৮ জন কাউন্সিলর ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৮ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নগরীর বিভিন্ন স্থানে আনুষ্ঠানিক জনসংযোগকালে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আবদুল খালেক আধুনিক খুলনা মহানগরী গড়ে তুলতে নগরবাসীর সমর্থন চেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় অর্থ থাকলেও গত পাঁচ বছর সামগ্রিক উন্নয়ন থেকে খুলনা মহানগরী পিছিয়ে পড়েছে অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। আগামী ১৫ মের নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তোলার শপথ নিতে হবে। এর আগে তিনি দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে মালা দেন।

গণসংযোগের সময় খালেকের সঙ্গে ছিলেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ, প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য এসএম কামাল হোসেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র কাজী আমিনুল হক, বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ সোহেলসহ মহানগর, জেলা ও থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আবদুল খালেকের নির্বাচনী ইশতেহার বুধবার (২৫ এপ্রিল) ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু দলীয় কার্যালয়ে বিশেষ দোয়া মোনাজাত শেষে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেন। ‘গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি’ স্লোগানে পথচারী, যানবাহনের যাত্রী, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরতদের হাতে ধানের শীষের লিফলেট তুলে দেওয়া হয়। কর্মীরা হ্যান্ডমাইকে আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করতে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে টুটপাড়া কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেন।

গণসংযোগের সময় মঞ্জুর সঙ্গে ছিলেন নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, বিজেপির অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, জামায়াতের মাওলানা গোলাম রসুল, পিপলস লীগের ডা. আফতাব হোসেন প্রমুখ।

এর আগে সকালে প্রথমে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেককে নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শাহজালাল সুজন প্রমুখ।

পরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ধানের শীষ প্রতীক দেওয়া হয়। এ সময় তার সঙ্গে ২০-দলীয় জোটের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু প্রমুখ।

এরপর ক্রমান্বয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) এসএম শফিকুর রহমানকে লাঙ্গল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হককে হাতপাখা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বাসদসহ পাঁচ দলের প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবুকে কাস্তে প্রতীক দেওয়া হয়। মেয়র প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত প্রতীক দেওয়ার পর সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে তাদের পছন্দের প্রতীক দেওয়া হয়।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই জনসংযোগে নেমে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা। নিজ নিজ ওয়ার্ডে প্রচারণা চালাচ্ছেন সাধারণ ও নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরা। এর আগে গতকাল সকাল ১০টা থেকে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল। জিসিসি নির্বাচনে সাত মেয়র প্রার্থীসহ সাধারণ ৫৭টি ওয়ার্ডে ২৫৬ জন কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৪ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম নেতাকর্মীদের নিয়ে গাজীপুর সিটির আউটপাড়া এলাকায় জাতীয় পার্টির মহানগর কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার মিয়ার বাড়ি গিয়ে দোয়া নেন। এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মোকসেদ আলম, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জাপা নেতা আবদুস সাত্তার প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে একাÍতা ঘোষণা করে ১৪-দলের প্রার্থীর পক্ষে একযোগে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

জাহাঙ্গীর আলম এরপর ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের টঙ্গী দত্তপাড়া হাউজ বিল্ডিং এলাকায় যান এবং সেখানে নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন করে একটি পথসভা করেন। পরে বনমাল ও আলম মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেন।

বিএনপির প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জেলা শহরের রথখোলা এলাকা থেকে মিছিল বের করেন এবং এলাকাবাসীর মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন। এরপর বিএনপির জেলা কার্যালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নির্বাচনী দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন এবং সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় তার সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে দলীয় কার্যালয় থেকে পুবাইলের সুকুন্দিবাগ বাজার, টঙ্গীর বনমালা এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যান। বেলা ১১টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীসহ প্রতীক নিতে আসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম। রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রথমে সাত মেয়র প্রার্থী, পরে সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন।

রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম নৌকা, বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার ধানের শীষ, ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান মিনার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন হাতপাখা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন মোমবাতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন কাস্তে ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ টেবিলঘড়ি প্রতীক পেয়েছেন।

এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে একই প্রতীকে একাধিক প্রার্থীর পছন্দ থাকায় সেখানে লটারির মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!