• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার

কারা আসছেন জামায়াতের নেতৃত্বে?


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ১০, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম
কারা আসছেন জামায়াতের নেতৃত্বে?

জামায়াত নেতাদের ফাইল ছবি

ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমদসহ কেন্দ্রীয় ছয় নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় আবারো সংকটে পড়েছে দলটি। গত সাত বছরের মধ্যে এবার দলটির এতগুলো কেন্দ্রীয় নেতা একসঙ্গে গ্রেপ্তার হলেন। এর আগে সাবেক আমির গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এক সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সোমবার রাত নয়টায় রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় দলীয় বৈঠক চলাকালে আমির মকবুল আহমদ, নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ ৯ নেতাকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

মাত্র দশ দিনের মাথায় এত নেতা এক সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়ায় দল ও দলের বাইরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দলটির ঢাকা মহানগরি দক্ষিণের আমির সেক্রেটারিসহ নেতৃস্থানীয় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ফলে জামায়াতের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাকেই গ্রেপ্তার করা হলো। 

এতে দ্বিতীয় দফায় নেতৃত্বের সংকটের মুখে পড়লো জামায়াত। এই ঘটনায় নতুন চিন্তা যুক্ত হলো দলে। ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন মূল প্রশ্ন—কারা আসছেন দলের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে ভারপ্রাপ্ত হয়ে? এ বিষয়ে দেশের র্শীষ এক অনলাইন নিউজ প্রোটাল সোমবার মধ্যরাতে জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩-১৪ সেশনে রাজনৈতিক কারণে জামায়াত আন্দোলনে গেলেও ২০১৫ সাল থেকে নীরবেই দল সংগঠিত করা হয়। চলতি বছরেও মজলিসে শুরার অঞ্চলভেদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরো একবছর রাজপথের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। 

এর রেশ দেখা গেছে সোমবার রাতেও। দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান মঙ্গলবার বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছেন এবং নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের আটকের পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ জরুরি বৈঠক করবে। সর্বোচ্চ-সংখ্যক সদস্যের অভিমতের ভিত্তিতে খুব দ্রুত ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ঠিক করবে এই পরিষদ।

দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান দায়িত্ব পেতে পারেন। আর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে নির্বাহী পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম খান হতে পারেন। বিগত কমিটি তিনি সেক্রেটারি হিসেবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডা. শফিকুর রহমানের। এক্ষেত্রে রফিকুল ইসলাম খান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হলে নতুন চিন্তায় পড়বে নেতাকর্মীরা।

সোমবার রাতে একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, মুজিবুর রহমান ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে ঠিক থাকলেও রফিকুল ইসলাম খান হলে তৃণমূলের পরিস্থিতি আরও আশঙ্কার মধ্যে পড়বে। ১৩-১৪ সালের সহিংস আন্দোলনে রফিকুল ইসলাম খানের অতি-আগ্রহী ভূমিকার কারণে তৃণমূল জামায়াত তাকে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। এক্ষেত্রে নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম বা আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে বেছে নেয়া হতে পারে। 

এছাড়া হামিদুর রহমান আজাদও আছেন। সিনিয়রিটির দিক থেকে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক থাকলেও তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন দীর্ঘদিন ধরেই। ফলে, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল নিয়ে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে চিন্তা রয়ে গেছে।

যে কারণে এত নেতা এক সঙ্গে গ্রেপ্তার
জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শীর্ষ নেতাদের একসঙ্গে আটকের পেছনে সরকারের অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকলেও এই পরিকল্পনা সফল হয়েছে ভিন্ন কারণে। সোমবার রাতে উত্তরার একটি বাসায় আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন, এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতারা ওই বাসায় একসঙ্গে হলেও বেঁচে গেছেন দুই নেতা। যাদের কেন্দ্র করে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

জানা যায়, সাতকানিয়া আসন থেকে এমপি হয়েছেন শাহজাহান চৌধুরী ও নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম দু’জনই। কিন্তু আগামী নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, এ নিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ও মহানগর নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। এই মতবিরোধ মেটাতেই দলের আমির মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ার চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের ডেকেছিলেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামের তিন নেতা বৈঠকস্থলে পৌঁছলেও শাহজাহান চৌধুরী ও শামসুল ইসলাম দেরি করে ফেলেন। এরই মধ্যে গোয়েন্দারা তাদের অবস্থান চিহ্নিত করেন।

সরকারের প্রভাবশালী দু’টি গোয়েন্দাসংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিগত এক মাসের বেশি সময় ধরেই জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা শুরু হয়। কিন্তু একইসঙ্গে এতজন কেন্দ্রীয় নেতাদের পেয়ে যাবেন, এটি তারা ভাবেননি।

গোয়েন্দা সূত্রটি জানায়, চট্টগ্রাম থেকেই গোয়েন্দাসূত্র জানায়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দ্বন্দ্ব মেটাতে ঢাকায় আসছেন। এরই মধ্যে আটক করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সংস্থাগুলো। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে কাজ করে।

সূত্রগুলো জানায়, আটককৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময় মামলা করা হয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের সে সব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এরই মধ্যে আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে নতুন করেও মামলা হতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধিরা ইতোমধ্যে তার জেলা ফেনীতে গিয়েছেন দুই দফা।

আটকের বিষয়ে সোমবার রাতে তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘আজ সন্ধ্যায় দলের আমিরের নেতৃত্বে ঘরোয়া বৈঠকের সময় পুলিশ অন্যায়ভাবে দলের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আটক করে।’

এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে আটক হন জামায়াতের প্রথম সারির চার নেতাসহ ৯ জন। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও কেন্দ্রীয় মসজলিসে শুরার সদস্য আবদুস সবুর ফকির, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাওলানা ফরিদুল ইসলাম উল্লেখযোগ্য।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!