• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেলা বিএনপির সভাপতি পদ ২৬ লাখ টাকায়!


রাজশাহী প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬, ১১:২১ এএম
জেলা বিএনপির সভাপতি পদ ২৬ লাখ টাকায়!

নিত্যপণ্যের বাজার দরের ন্যায় আজকাল রাজনৈতিক দলের পদও বিক্রি হয়। এমন ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজশাহী জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির বেলায়। বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত টাকা নিয়ে দলের একজন যুগ্ম মহাসচিবের মাধ্যমে নতুন কমিটির সভাপতি পদটি তোফাজ্জল হোসেন তপুর কাছে বিক্রি করেছেন। তপু ওই পদ কিনেছেন ২৬ লাখ টাকায়!

নবগঠিত জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন এই অভিযোগ করে বলেন, নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত ও ব্যক্তিত্বহীনদের এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে বিএনপির চেতনার সঙ্গে বেইমানি করেছেন কয়েক নেতা। দলের চেয়ারপারসনকে ভুল বুঝিয়ে পদ বাণিজ্য করা হয়েছে। এই লোককে নিয়ে দল কখনও হবে না।

এ বিষয়ে বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, যারা এ ধরনের অভিযোগ করছেন তারা কখনও বিএনপির জন্য হামলা, মামলা বা জেলজুলুমের শিকার হননি। আর বিএনপির এখন যে অবস্থা তাতে কোন নেতা কিসের আশায় এত টাকা দিয়ে পদ কিনবেন? সৈয়দ মহসিনকে যে পদ দেয়া হয়েছে তাতে ওনার কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।

তবে নতুন সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, এ ধরনের অভিযোগ অরাজনৈতিক ও কুরুচিপূর্ণ অভিযোগের কোনো উত্তর হয় না। আমি ৩৫ বছর ধরে রাজনীতি করে আসছি। এই দায়িত্ব আমার কাছে পবিত্র আমানত।

এদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে সিটি মেয়র (সাময়িক বরখাস্ত) মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল হক মিলন এবং জেলা শাখায় সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মতিউর রহমান মন্টুর নাম ঘোষণার পরই একটি অংশ বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা না মেনে দলের এই অংশটি ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তাদের দাবি, মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে বাদ দিয়ে গঠিত এই কমিটি অযোগ্য।

এরই মধ্যে বিক্ষুব্ধ কিছু নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়েছেন। বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের ব্যক্তিগত চেম্বারে হামলাও হয়েছে। তবে নতুন কমিটির পক্ষে থাকা নেতাকর্মীরা বলছেন, কয়েক দফা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে কেন্দ্র থেকে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটি গঠনের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন সরাসরি জড়িত। তিনি সার্বিক দিক বিবেচনায় মিনু ও নাদিমকে বাদ দিয়ে কমিটি দিয়েছেন। অথচ কিছু দলছুট নেতা দলেরই সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্ত মানতে চাইছেন না। এ ধরনের আন্দোলনের চেষ্টা করে তারা দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাতে লাভ হবে না।

জানা গেছে, ২৭ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ২১ সদস্যবিশিষ্ট ও রাজশাহী জেলার ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির (আংশিক) ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই দুই কমিটি থেকেই এবার বাদ পড়েছেন বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফা। মহানগর শাখার আগের কমিটিতে মিনু সভাপতি ছিলেন। নাদিমও জেলা শাখার আগের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন। কিন্তু দুই প্রভাবশালী নেতা বাদ পড়ায় রাজশাহীতে বিএনপির রাজনীতি নয়া মেরুকরণের দিকেই এগিয়ে গেল।

দলের নেতাকর্মীদের একটি অংশের ধারণা, সরকারবিরোধী আন্দোলনে হাইকমান্ডকে খুশি করতে না পারায় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে মিজানুর রহমান মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে। রাজশাহীর রাজনীতিতে মিনু-নাদিমের মাইনাস হয়ে যাওয়ার বিষয়টিই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে।

এদিকে মিনু-নাদিম বাদ পড়ায় তাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নেতাকর্মী চরম ক্ষুব্ধ। বুধবার রাতে তারা মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে তালাও ঝুলিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর গণকপাড়ায় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের ব্যক্তিগত চেম্বারে হামলাও হয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা দফায় দফায় মিটিংও করেছেন। এই দলে রয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি নজরুল হুদা এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ মহসিন।

তবে ক্ষুব্ধ অংশের নেপথ্যে থেকে যুবদল নেতা রবিউল আলম মিলু, রায়হানুল আলম রায়হান, আবুল কালাম আজাদ সুইট ও মাহফুজুর রহমান রিটন দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে অপর অংশের নেতারা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে রাজপাড়া থানা যুবদলের সভাপতি শাহানুর ইসলাম মিঠু বলেন, য্বুদলের এই চার নেতা মিনু ও নাদিম মোস্তফাকে কমিটিতে ফিরিয়ে আনার দাবি তুলেছেন। কারণ ২০১৪ সালের আগস্টে মিনু যুবদলের গোপন কমিটি করে তাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছিলেন। দলের স্বার্থে নয়, নিজের স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত করতে তারা বর্তমান মহানগর ও জেলা কমিটির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা দলের ভেতরে উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রায়হানুল আলম রায়হান বলেন, রাজশাহীতে মিনু-নাদিম ছাড়া বিএনপির রাজনীতি চলতে পারে না। তাদের দু’জনের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা এখনও গড়ে ওঠেনি। এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে গঠিত (পরে স্থগিত) মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, ‘যদি আমরা নেপথ্যেও শক্তি হয়ে থাকি তাহলে আমাদের বাদ দিয়ে রাজশাহীতে বিএনপির রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। বর্তমান মহানগর সভাপতি বুলবুল নিজেই এখন আমাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন। এজন্য আমাকে কোথাও রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছেন না।’

রিটনের অভিযোগ, ‘মহানগর কমিটিতে সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া বাকি ১৯ জনকে বিগত ১০ বছরে বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তারা কিভাবে পদ পেয়েছেন তা আমরা জানতে চাই।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!