• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় ‘ক্যাপ্টেন’ মিসবাহ


ক্রীড়া ডেস্ক মে ১৫, ২০১৭, ০৯:১২ পিএম
বিদায় ‘ক্যাপ্টেন’ মিসবাহ

ঢাকা: বিদায় বেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়ে সিরিজ জিতিয়েছেন। যেটা আগে কেউ কখনো পারেননি। সেই কাজটিই করেছেন মিসবাহ-উল-হক। ১০১ রানে ডমিনিকা টেস্ট জিতে পাকিস্তান ২-১-এ সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। আর এরই সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রিকেট থেকে খসে পড়লো দুটি তারা। মিসবাহ-উল-হক ও ইউনিস খান।

একসঙ্গে দুই মহিরুহের শুণ্যতা পূরণ করতে পাকিস্তানের সময় লাগবে। বিদায় বেলায় গোটা ক্রিকেট বিশ্ব মিসবাহ-ইউনিসকে ধন্যি ধন্যি করছে। করারই কথা, যে অবস্থা থেকে পাকিস্তানকে টেনে তুলেছেন মিসবাহ সেটা অকল্পনীয়। ২০১০ সালে সালমান বাট, মোহাম্মদ আমির আর মোহাম্মদ আসিফ স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি করে পাকিস্তানের ক্রিকেটকে বিপথে ঠেলে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে নেতৃত্ব নিয়ে এই দলটিকে এক সূতোয় গাঁথেন মিসবাহ। বিদায় বেলায়ও তিনি পাকিস্তানকে বিরল এক সম্মান উপহার দিয়ে গেলেন। ক্যারিবিয়ানের এতোদিনের অধরা সিরিজ জিতে নিয়েছে পাকিস্তান। যেটা পাকিস্তানের কোনো ‘ক্যাপ্টেন’ করতে পারেননি।

অথচ মিসবাহর চলার পথ মসৃণ ছিল না। ২০০১ সালে  তার টেস্ট অভিষেক হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এর এক বছর বাদে রঙিন পোশাক ওঠে তাঁর গায়ে। সেখান থেকে কোথায় সামনের দিকে এগোবেন তা না, মিসবাহ হারিয়ে গেলেন! আর  সেই সময় পাকিস্তান দলে যারা ছিলেন তাদের টপকে দলে জায়গা করে নেওয়া সহজ ছিল না।
মিসবাহ ফিরলেন ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিলেন। শেষে গিয়ে একটা স্কুপ শট মিসবাহকে হিরো থেকে ভিলেন বানিয়ে দিল।

২০১০ সালে নেতৃত্ব পেয়ে মিসবাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রথম টেস্ট সিরিজ জেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১১ সালে। এরপর ২০১২ সালে টেস্টের এক নম্বর দল ইংল্যান্ডকে আরব আমিরাতে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করে পাকিস্তান। এরমাঝে রঙিন পোশাকে একটা রেকর্ড করে বসেন মিসবাহ। ক্রিকেটে বিশ্বে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে কোনো সেঞ্চুরি ছাড়াই পাঁচ হাজার রান করেছেন। এই রেকর্ডের মধ্যে গর্ব নেই, আছে আফসোস। তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস যে অপরাজিত ৯৬। এটি মিসবাহ করেছিলেন ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সে বছরই তিনি আরেকটি রেকর্ড নিজের নামের পাশে বসান। এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি ১৫টি ফিফটির মালিক মিসবাহ।

২০১৪ সালে আবুধাবিতে আরেক কীর্তি গড়েন পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি স্যার ভিভ রিচার্ডসের রেকর্ডে ভাগ বসান। এতদিন টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৫৬ বলে সেঞ্চুরি ছিল ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির। অসি বোলারদের বেধড়ক পিটিয়ে সমসংখ্যক বল খেলে সেঞ্চুরি করে রিচার্ডের পাশে বসেন মিসবাহ। দুই ইনিংসেই তিনি সেঞ্চুরি করেন। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০ বছর পর পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়।

২০১৫ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছিলেন মিসবাহ। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয় পাকিস্তান। এই ম্যাচের পর মিসবাহও রঙিন পোশাক তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন।

২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর ছয় বছর পর গত বছর ইংল্যান্ড সফর করেছিল পাকিস্তান। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে গিয়েছিলেন মিসবাহ। লর্ডস টেস্ট জিতে সেটা পূর্ণ হয়েছে তাঁর। ‘বুড়ো’ মিসবাহ যে ফুরিয়ে যাননি সেটা লর্ডসের ময়দানে সেঞ্চুরি করে বারকয়েক বুক ডন দিয়ে বুঝিয়ে দেন তিনি। ওই সেঞ্চুরির সময় মিসবাহর বয়স ছিল ৪২ বছর ৪৭ দিন। সবচেয়ে বেশি বয়সে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড নিজের নামে লিখে নেন তিনি।

ইংল্যান্ডের সঙ্গে চার টেস্টের সিরিজ ২-২ এ সমতায় শেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তান সবচেয়ে বড় পুরস্কার পায় র্যাং কিংয়ে এক নম্বরে উঠে। এই প্রথম মিসবাহর হাত ধরে টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর জায়গাটি দখল করে পাকিস্তান।

গত বছরের শেষের দিকে মুদ্রার অন্যপিঠও দেখেন মিসবাহ। অস্ট্রেলিয়া সফর মোটেও ভালো কাটেনি তাঁর। আট ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩৮। পাকিস্তানও হোয়াইটওয়াশ হয়। এরপর মিসবাহকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করা হয়। সেই তিনি ক্যারিয়ার সায়াহ্নে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ জয় করে পাকিস্তানে ফিরছেন। এখন অস্ট্রেলিয়া দুঃখ আর কার মনে থাকবে! বীরদের যে সম্মান জানাতে হবে!

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!