• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রধান আসামি জনি গ্রেফতার

বোনের চাওয়ায় কাকরাইলে জোড়া খুন


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৫, ২০১৭, ০১:২০ পিএম
বোনের চাওয়ায় কাকরাইলে জোড়া খুন

ঢাকা : ঢাকার কাকরাইলে মা ও ছেলেকে খুনের প্রধান আসামি আল আমিন জনিকে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। জনি (৩৩) নিহত শামসুন্নাহারের স্বামী আব্দুল করিমের তৃতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার মুক্তার ভাই। গত বুধবার হত্যাকাণ্ডের পরপরই করিমকে আটকের পর পরদিন বৃহস্পতিবার মুক্তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি জনিকে খোঁজা হচ্ছিল।

গতকাল শনিবার (০৪ নভেম্বর) ভোররাতে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে জনিকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসান। তিনি বলেন, ‘হত্যার কথা স্বীকার করেছে আল আমিন। কী কারণে এবং কীভাবে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে সে আস্তে আস্তে মুখ খুলছে।’

জনি বলেছে, আবদুল করিমের বেপরোয়া জীবন-যাপনে প্রধান বাধা ছিল প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার। তার একাধিক বিয়ে নিয়ে শামসুন্নাহারের সঙ্গে পারিবারিক কলহ লেগেই ছিল। ছয়মাস আগে তৃতীয় স্ত্রী মডেল শারমিন মুক্তাকে নিয়ে রাঙ্গামাটিতে ঘুরতে যান আবদুল করিম। সেখানেই প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি। যেহেতু কাকরাইলের বাড়িটিসহ অনেক অর্থসম্পদ শামসুন্নাহারের নামে ছিল। সেহেতু মুক্তাও চিন্তা করেন তাকে সরিয়ে দিতে পারলে তিনি সব সম্পত্তি ভোগ করতে পারবেন।

এদিকে, মুক্তার ভাই জনি ছিলেন বেকার। তার সঙ্গে স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় তার সন্তানকে দেখাশোনা করতেন বোন মুক্তা। তার সামগ্রিক খরচও বহন করতেন মুক্তা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তা তার ভাই জনিকে বলেন, শামসুন্নাহারকে খুন করার ব্যবস্থা করতে। তখন জনি বোনের প্রলোভনে গত ১ নভেম্বর কাকরাইলের বাসায় ঢুকে শামসুন্নাহারকে ছুরিকাঘাত করে খুন করেন। এ সময় তার ছোট ছেলে শাওন এ ঘটনা দেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জনি পেছন থেকে দৌড়ে বাসার সিঁড়িতে শাওনকেও ছুরিকাঘাত করে খুন করেন।

১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কাকরাইলের নিজ বাসায় (বাসা নং- ৭৯/এ) শামসুন্নাহার করিম (৪৫) ও তার ছোট ছেলে শাওনকে (১৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এরপর সন্দেহজনকভাবে নিহতের স্বামী আব্দুল করিম ও তার তৃতীয় স্ত্রী শারমিন মুক্তাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন শামসুন্নাহারের ভাই আশরাফ আলী বাদী হয়ে করিম, মুক্তা ও জনির নাম উলে­খ করে একটি মামলা দায়ের করেন।

করিম ও মুক্তা বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন এবং জনিকে শনিবার ভোরে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়েনের (র‌্যাব) সদস্যরা।
রিমান্ডে করিম ও মুক্তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক কর্মকর্তা জানান, করিমের সঙ্গে বিভিন্ন মেয়ের সম্পর্ক ছিল। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর মুক্তাকে বিয়ে করে। এসব নিয়ে প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারের সঙ্গে করিমের প্রায়ই ঝগড়া হতো।

শামসুন্নাহার করিমকে রাস্তা-ঘাটে এবং তার অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সময় অপদস্থ করেন। তার সঙ্গে ঝগড়া করে গত আট মাস আগে পল্টনে মুক্তাকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন করিম। এসব বিষয়ে করিম প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহারকে নিয়ে বিরক্ত ছিল। তার ইচ্ছেমত  জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ান শামসুন্নাহার। সেজন্য রাঙ্গামাটি যাওয়ার পর মুক্তাকে নিয়ে শামসুন্নাহারকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি। মুক্তাও তার ভাইকে বলেন, এ কাজটা করে দিতে হবে।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘটনার দিন জনি একটি ছুরি নিয়ে কাকরাইলের বাসায় প্রবেশ করে গলাকেটে শামসুন্নাহারকে খুন করেন। বিষয়টি দেখে ফেলেন তার ছোট ছেলে শাওন। শাওন দৌড়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় জনি পেছন থেকে ধরে সিঁড়িতে শাওনকেও ছুরিকাঘাত করে খুন করেন। হত্যার পর করিম এ ঘটনায় তৃতীয় স্ত্রী মুক্তা ও তার ভাই জনিকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চিন্তা করেছিলেন। তাতে তিনি সব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করেছিলেন বলেও পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছেন।

এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, আসামি দু’জন রিমন্ডে আছে, তারা তথ্য দিতে শুরু করেছেন। রিমান্ড শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এদিকে, শনিবার দুপুরে সার্কিট হাউজ মসজিদে নিহত দু’জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে উপস্থিত রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন বিদেশ ফেরত শামসুন্নাহারের দুই ছেলে মুন্না ও অনিক।

বড় ছেলে মুন্না বলেন, স্যার, আমার মা এতো কষ্ট করে মারা গেল। ওরা আমার ভাইকেও ছাড়ল না। আমরা এর বিচার চাই। আমার বাবাও যদি দোষী হয় তারও বিচার চাই আমরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!