• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বেচ্ছাচারিতায় পুরোনো ছকের বিদায় ঘণ্টা?


সুজন আকন ও মেহেদী হাসান ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬, ০৮:৪১ পিএম
স্বেচ্ছাচারিতায় পুরোনো ছকের বিদায় ঘণ্টা?

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ফলাফল স্থানীয় রাজনীতির মানচিত্র একদমই পাল্টে দিয়েছে, দিচ্ছে। নতুন মেরুকরণের পথে ছুটছে নেতৃত্ব। শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় তছনছ হয়ে যেতে পারে পুরোনো ছক। আর এ বিষয়টা অনিবার্য হয়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ক্ষেত্রে।

দলীয় সূত্রমতে, জেলা বিএনপির প্রভাবশালী ও শীর্ষ নেতারা কোনোভাবেই মাথা নত করতে রাজি নন কারো কাছে। বিশেষ করে কেন্দ্রের নির্দেশনা কিংবা বলা যায় খোদ দলীয় চেয়ারপারসনের কথাও তারা উপেক্ষা করেছেন। নাসিকে ধানের শীষের পরাজয়ের পেছনে বিজয়ী প্রার্থী আইভীর জনপ্রিয়তাকে যেমন করে ‘ফ্যাক্টর’ ভাবা হচ্ছে, তেমন করে দলের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করতে নারাজ তারা। এ কারণে কেন্দ্রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ওইসব শীর্ষ নেতাদের। কমিটি পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে শিগগিরই এসব প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

একাধিক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিনকে নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নাসিক নির্বাচনের দলীয় মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে প্রচারণা চালাতে খোদ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনজনের কেউই নাসিক নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ দেখাননি।

প্রথমে তো তারা নির্বাচনে থাকতেই রাজি হননি। পরে চেয়ারপারসন তাদের ডেকে সাখাওয়াতের পক্ষে কাজ করতে কড়া নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে তৈমূর আলমকে নারায়ণগঞ্জ শহর, গিয়াসউদ্দিনকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও আবুল কালামকে বন্দরের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ভোটের ১৭ দিন আগে গেল ৫ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে শুরু করেন প্রচারণা। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রচারণায় অংশ নেন।

তবে এতোকিছুর পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি আর প্রচারণা যজ্ঞের পরেও বিপুল ভোটে পরাজয় বরণ করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, ভোটের তিনদিন আগে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতারা যতক্ষণ নারায়ণগঞ্জে ছিলেন ততক্ষণ শহর চাঙা থাকলেও ২০ ডিসেম্বর থেকে একেবারে ফাঁকা হয়ে পড়ে বিএনপির অফিস ও নির্বাচনী ক্যাম্প। এরপর ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিনও অনেক কেন্দ্রে বিএনপির কোনো লোকজনকে দেখা যায়নি। পোলিং এজেন্ট ছিল না বন্দরে। শহরে ক্যাম্প স্থাপনের জায়গা না থাকায় শেষতক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুর বাসায় তা স্থাপন করা হয়।  দিপুও স্থানীয় নেতাদের সমন্বয় করে সেখানে সবাইকে বসানোর চেষ্টা করায় ওই ক্যাম্পটিই চাঙা থাকে।

অভিযোগ করা হচ্ছে, সাখাওয়াতকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেনি স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সে কারণেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখানোর জন্যই তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে শোডাউন করেছিল। শুধু কি তাই? নির্বাচন চলাকালীন প্রচণ্ড সমন্বয়হীনতা দেখা যায়।

স্থানীয় নেতাদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ উঠলেও কেন্দ্রের তৎপরতার কারণে কেউ মুখ খোলেননি। তবে ২২ ডিসেম্বর ভোটের দিন তার প্রভাব পড়ে। নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির পর ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে তার কারণ জানতে ডাকা হয়েছে জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, সাবেক দুই এমপি আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দিনকে।

এদিকে, মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হারলেও গিয়াসউদ্দিনের ছেলে গোলাম সাদরিল ও তৈমূরের ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ কাউন্সিলর পদে জিতেছেন। বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্তব্য করেন, নাসিক নির্বাচনের ফলাফলের কারণে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আসতে পারে আমূল পরিবর্তন। পুরোনো ছকের নেতৃত্ব ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

এ কারণে আগামীতে কমিটিতে পরিবর্তন হতে পারে। তা ছাড়া জেলা কমিটি ইতোমধ্যে পার করেছে সাত বছর। এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। মহানগর কমিটি তো এখনো গঠনই করা হয়নি।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ না, বরং বলব সফল। একেবারে নতুন একজন প্রার্থীকে নিয়ে লড়তে আমাদের কষ্ট হলেও লড়েছি। কমিটি পুনর্গঠন হলে গতি বাড়বে। চেয়ারপারসন কী করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!