• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হে বিশ্ববাসী, আমি নূর রোহিঙ্গা বলছি


ফিচার ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭, ১১:০৫ এএম
হে বিশ্ববাসী, আমি নূর রোহিঙ্গা বলছি

দশ বছরের নূর কাজল

ঢাকা: দশ বছরের নূর কাজল, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। চোখের সামনেই সেনাবাহিনীর গুলিতে নিজের বাবাকে মরতে দেখেছে সে। এখন সে আবারো তার গ্রামে ফিরতে চায়, সে তার সুন্দর গ্রামটির আবারো সেই কলাহল দেখতে চায়। এ জন্যই বিশ্ববাসীর সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছে- কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির থেকে নূর কাজলের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক কেটি আননল্ড। সেই সাক্ষাতকারে নূরা বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করেছে-

আমার নাম নূর কাজল, আমার বয়স দশ বছর। আমি আমার গ্রামে খুবই ভাল ছিলাম, কারণ সেখানে আমি একটি মাদরাসায় পড়তাম, সেখানে আমাদের কুরআন শিখানো হতো। আমার ইচ্ছা ছিল পুরো কুরআন মুখস্ত করা। সেখানে আমাদের ছোট্ট ঘরে সাত জন বাস করতাম, তাও খুব আনন্দ লাগতো।

হঠাৎ সেদিন- আমার বাবা আমাকে কোলে নেয়। এমন সময় সেনারা বাইরে থেকে গুলি করে। জানলা দিয়ে গুলি এসে বাবার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বাবা ঘরের মেঝেতে পড়ে যান। আমি ভয়ে কাঁদছিলাম। বাবা তখনও ছটফট করছেন। তার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছিল। তখন সেনারা আমাদের ঘরের দিকে এগিয়ে আসছে।  আমরা দৌঁড়ে পালালাম। সেনারা আমাদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল। আমার বাবা ঘরের ভেতরেই ছিলেন। বাবাকে আর দেখতে পারিনি। পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নূর কাজল আবার ফিরে যেতে চায় তার গ্রামে। যেখানে বাবাকে বুলেটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ছটফট করা অবস্থায় রেখে এসেছিল নূর কাজল।

‘সেনাদের হামলার পর আমরা পালিয়ে আসি। আমরা জীবন বাঁচাতে দৌঁড়তে থাকি। তিন দিন ধরে বন, বিল, খাল আর নদী পেরিয়ে আমরা বাংলাদেশে এসেছি। পথে আমার খুব ক্ষুদা পেয়েছিল। কিন্তু কোনো খাবার ছিল না। এখন আমার বাবার কথা মনে পড়ছে।’

‘আমাদের সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে অনেকে সাহায্য করেছিল। তারা খুব ভালো মানুষ ছিল। আমরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে নদী পার হচ্ছিলাম। কিন্তু আমি কোনো আনন্দ পাইনি। কারণ আমার বাবার কথা মনে পড়ছিল। এখরো আমার বাবাকে মনে পড়ছে।’

‘আমার বাবা একজন কাঠুরে ছিলেন। তিনি খুবই সাধারণ একজন মানুষ ছিলেন। গ্রামের সবাই বাবাকে খুব ভালোবাসত। বাবাও আমাদের খুব ভালোবাসতেন।’

‘আমি বাংলাদেশে এসেও খুব কষ্টে আছি। কারণ সবসময় আমার বাবাকে মনে পড়ে। এখানকার পরিবেশও ভালো না। বাথরুম বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নেই।’

‘এখন আমি আমার গ্রামে ফিরে যেতে চাই। এজন্য বিশ্ববাসীর কাছে আমি সাহায্য চাচ্ছি। আমাকে আমার গ্রামে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।’

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে ১৭৬টি গ্রামের ৪ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে রোহিঙ্গারা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!