• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৪, ২০১৭, ০৩:১৭ পিএম
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ বনাম ‘গণতন্ত্র হত্যা’ দিবস

রাজপথে সরকারি দল ছাড়া আর কেউ নেই। এই হাহুতাশের মধ্যেই বছর শেষের এক দিন আগে আবারো মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বিগত একটি বছর কোনো ধরনের আন্দোলন জমাতে পারেনি দলটি। তাই এখন অনেকেই বিএনপিকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বন্দি সংবাদ সম্মেলন-নির্ভর দল বিবেচনা করছেন।

অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীরা দলটিকে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা ওদিকে না তাকিয়ে আবারো ইস্যু হিসেবে সামানে এনেছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে। এ দিনটিকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ঢাকার বাইরে সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল এবং ৭ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। 

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে ৫ জানুয়ারি ঢাকার দুই জায়গায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সেইসঙ্গে দলের একাধিক নেতা বলেছেন, ওইদিন বিএনপিকে জনগণ পথে নামতে দেবে না। অন্যদিকে এদিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ আদালতে হাজিরা দেয়ার কথা রয়েছে। আদালতে গেলে আদালত চত্বর এবং এর আশপাশে ব্যাপক শোডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে নতুন করে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।    

দিনটিকে সামনে রেখে গত শুক্রবার এক সভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে জনগণ বিএনপিকে রাজপথে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেবে না।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার শরিকরা। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে (২০১৫) বিএনপি গণতন্ত্র ‘হত্যা দিবস’ এবং আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের ‘বিজয় দিবস’ পালনের ঘোষণা দিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিলে তৈরি হয় উত্তেজনা। পুলিশ ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সমাবেশের পথ বন্ধ করে দিলে খালেদা টানা অবরোধের ঘোষণা দেন। এরপর তিন মাসে নজিরবিহীন সহিংসতা ও নাশকতায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যার পেছনে বিএনপিকেই দায়ী করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দশম সংসদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলতি বছর ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করেছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি এগিয়ে আসায় গত ২৮ ডিসেম্বর কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল করবে তার দল। আর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ জানুয়ারি হবে সমাবেশ।

গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের এক যৌথসভায় বিএনপির ওই কর্মসূচি নিয়ে কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা হানিফ। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পলন করবে, আর বাংলার মানুষ বসে থাকবে না। বাংলার জনগণ এটা মেনে নেবে না।

বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ‘ভুল করেছে’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ওই দিন যদি গণতন্ত্রের হত্যা চেষ্টা হয়ে থাকে, তবে সেটা করেছে বিএনপি। কারণ ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা মানুষকে শান্তিতে ভোট দিতে দেয়নি। ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে।... আমরা গণতন্ত্র রক্ষা করেছি আর বিএনপি জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আন্দোলন না করে বিএনপিকে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, নির্বাচন বয়কট করা কোনো ‘রাজনৈতিক সমাধান নয়’।

এদিকে ৫ জানুয়ারির পাশাপাশি ৭ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বিএনপির নেতারা আশা করছেন, দলের এই কর্মসূচি পালনে সরকার কোনো বাধার সৃষ্টি করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা সমাবেশের অনুমতি পাবেন।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের পক্ষ থেকে ৫ জানুয়ারি সারাদেশের জেলা-উপজেলায় কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যে কোনো মূল্যে তা হবেই। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ জানুয়ারি সমাবেশও হবে। ইতিমধ্যে আমরা সমাবেশের অনুমতি চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আশা করি, তারা আমাদের অনুমতি দেবে।’

এছাড়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং পরে সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিকে টার্গেট করেই মাঠে নামতে চায় বিএনপি। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনে জনমত তৈরির পাশাপাশি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই হচ্ছে দলটির বর্তমান লক্ষ্য। 

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭ জানুয়ারির সমাবেশ থেকে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব যে নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে। পাশাপাশি এই দাবির পক্ষে দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যও আহ্বান জানানো হবে। তিনি বলেন, আমরা অতীতের মতো এবারো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। প্রত্যাশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং সমাবেশের জন্য অনুমতি দেবে।

এছাড়া ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেয়া হবে না- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের দেয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘তিনি (হানিফ) সরাসরি বিএনপিকে হুঁমকি দিয়েছেন। এই হুঁমকি আমরা দিলে এতদিনে ১০টি মামলা হয়ে যেত।’ 

চৌদ্দ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন ছিল বিএনপির শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত- এ মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে উপহাস করা হয়েছে, যা আমাদের প্রতারক জাতিতে পরিণত করেছে। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েত করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ঢাকার বাইরেও ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ও তার শরিকরা। ফলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!