বাঁয়ে প্রখ্যাত স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ ও ডানে তার নকশা করা স্থাপনা গাউসিয়া টুইন পিক
ঢাকা : রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার সাতমসজিদ রোডে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গাউসিয়া টুইন পিক। প্রখ্যাত স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশের প্রতিষ্ঠান ভিসতারা আর্কিটেক্টস এই স্থাপনার ডিজাইন করেছে। বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পর নিজের নকশা করা এই ভবনটিতে সাধারণ মানুষকে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন খোদ স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বেইলি রোডের কোজি গ্রিন কটেজ নামের একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। আগুনে প্রাণ হারান ৪৬ জন। বেইলি রোডের এই অগ্নিকাণ্ডের পরপরই ফেসবুকে জোরেশোরে আলোচনা চলছে স্থাপনার অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে।
এই আলোচনার মধ্যে শুক্রবার (১ মার্চ) স্থপতি মুস্তফা খালিদ পলাশ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, তার ডিজাইন করা গাউসিয়া টুইন পিক ভবনটি মূলত কমার্শিয়াল স্পেস হিসেবে ডিজাইন করা। কিন্তু এর প্রতিটি ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফায়ার ডোরগুলো খুলে ফেলে ফায়ার স্টেয়ারের অংশেও তৈরি করা হয়েছে স্টোররুম।
তিনি তার স্ট্যাটাসে অভিযোগ করে বলেন, ভবনমালিক ও ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্থপতির নির্দেশনা না মেনেই স্থাপনাটিকে অনিরাপদভাবে ব্যবহার করছেন, যা মানুষের জানমালের জন্য হুমকিস্বরূপ। নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কেউ যেন সেখানে না যান, এমন প্রতীকী বার্তা দিয়েছেন তিনি। এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি অগ্নিনিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভবনমালিকসহ সবার প্রতি।
স্থপতি মুস্তফা খালিদ পলাশ স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘প্রতিনিয়ত এই ভবনটি (গাউসিয়া টুইন পিক) নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা এবং অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে ঝুকিপূর্ণ রেঁস্তোরা ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য রিপোর্ট স্বাক্ষর করার, তার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে ব্যবসা।
যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু করে দেয়া হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রয়িং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক, ডেভেলপারকে বারবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে। ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদেরকে এও জানানো হয় যে সঠিক ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।’
স্থপতি পলাশ উল্লেখ করেন, ‘উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গতমাসে ওই এলাকার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনমাস্টারকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি তা গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ট ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনিও তা সাধ্যমত করবেন বলে জানান। ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে ইত্যাদি। একজন সচেতন স্থপতি তো বটেই, একজন শহরবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব দৃশ্যমান অশনিসংকেতের মোকাবেলা করা।’
প্রসঙ্গত, স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ ডেলভিস্তা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ভিসতারা আর্কিটেক্টসের প্রধান। তিনি স্থাপত্যবিষয়ক ম্যাগাজিন 'ডট'-এর সম্পাদক এবং এর পাশাপাশ চিত্রশিল্পী হিসেবেও সমাদৃত। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি, জিপি হাউজ, র্যাংগস ব্যাবিলনিয়া, ওয়েস্টিন হোটেল, চট্টগ্রামের রেডিসন বে ব্লু হোটেলসহসহ দেশের বহু উল্লেখযোগ্য নান্দনিক স্থাপনার স্থপতি তিনি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।
এমটিআই
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।







































