• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
কাল থেকে কমতে পারে শীতের প্রকোপ

জনজীবনে ভোগান্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২১, ২০১৯, ০২:২৬ পিএম
জনজীবনে ভোগান্তি

ঢাকা : প্রথম শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে নিজ বৈশিষ্ট্যে হাজির পৌষ। মাস শুরুর দ্বিতীয় দিন থেকেই হঠাৎ জেঁকে বসে শীত। টানা তিন দিন ধরে রাজধানীতে সূর্যের দেখা নেই। কার্যত গত তিন দিনই দিন-রাত সমান। কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যের দেখা মিলছে না। এ শীতে নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট সীমাহীন আকার ধারণ করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুদিন দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়।

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গত বৃহস্পতিবার একই জেলায় সর্বনিম্ন ৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, আজ (গতকাল শুক্রবার) মধ্যরাত থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা সারা দেশে বিরাজ করতে পারে। কুয়াশা কাটলে ঠান্ডা কমে যাবে। দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু এ শৈত্যপ্রবাহ আরো দুদিন থাকার পর আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে কমতে পারে।

এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশনে দেখা মিললো কজন ছিন্নমূল মানুষের। জামিলা নামে এক মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। কারণ শীতের কোনো পোশাক নেই তাদের। একটি চাদর দিয়েই মা-মেয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।

জামিলা জানান, স্বামী নেই, মেয়েকে নিয়ে স্টেশনেই থাকেন। শীতে দিন কোনোমতে পার হলেও রাতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। কারণ শীতের কোনো কম্বল নেই তাদের।

আবার পাতলা চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়েও আছেন অনেকে। এমনই একজন শায়লা। নিজের থাকার কোনো বাড়ি নেই। রেলস্টেশনেই কাটছে তার জীবন। আর সবার মতো তিনিও শীতের কষ্টে দিন যাপন করছেন।

স্টেশনের পাশেই কজনকে দেখা গেল কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন। আবির নামে এক কিশোর বলল, আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে তারা বাঁচার চেষ্টা করছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার। শীতের সকালে সেখানকার ফুটপাতে কজন শুয়ে আছে। ময়লা চাদর গায়ে দিয়েই ঝুড়িতে ঘুমায় তারা। সারা রাত কারওয়ান বাজারে কাজ করে এখানেই ঘুমিয়ে কোনোমতে জীবনযাপন করছে তারা। তাদেরই একজনের নাম শায়েখ মিয়া, বাড়ি বরিশাল। তিনি জানান, রাতে কাজ করে সকালে ঘুমান। কম্বল কিংবা শীত নিবারণের কোনো উপকরণ নেই তার। তাই কষ্টও হয় ভীষণ।

শুধু বিমানবন্দর স্টেশন কিংবা কারওয়ান বাজারই নয়, শীতের এমন চিত্র দেখা গেল কমলাপুর রেলস্টেশন, ফার্মগেট ও বিজয় সরণির ফুটপাতসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় শীতে অনেককেই গোল হয়ে কাগজ-খড়কুটো পুড়িয়ে উষ্ণতা নিতে দেখা গেছে।

রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় তীব্র শীতেও থেমে নেই শ্যামল দাসের রিকশার প্যাডেল। দুই পা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন রিকশা। গায়ে নেই শীতের জামা। জিজ্ঞেস করলে জানালেন বাড়ি উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। তিনি জানান, যা আয় করেন, তার সিংহভাগই চলে যায় রিকশার ভাড়া ও থাকা-খাওয়া বাবদ। বাকিটা বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্ত্রী-সন্তানের জন্য। তাই চাইলেও শীতের কাপড় কিনতে পারেন না।

এভাবেই তীব্র শীতেও বসে নেই রাজধানীর নিম্নবিত্ত মানুষ। হাড়কাঁপানো শীতে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। তেমনি এ শীতে কষ্টে রয়েছেন ছিন্নমূল হতদরিদ্র মানুষেরা।

গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বজলুর রশীদ বলেন, আসলে সূর্যের আলো দেখা গেলেই শীতের প্রকোপ কমতে শুরু করবে। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, সারা দেশে আবহাওয়া শুষ্ক এবং কোথাও কোথাও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে।

রাজশাহী, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়াও সারা দেশে রাতের ও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!