• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান শেখ হাসিনার


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮, ০১:১১ পিএম
ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান শেখ হাসিনার

ঢাকা : রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে তিনি আসন্ন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘মানুষ মাত্রই ভুল করে। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। আমি নিজের এবং দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখার জন্য দেশবাসীর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটির নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কথা দিচ্ছি অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবো। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাঙ্ক্ষিত ক্ষুধা, দারিদ্য, নিরক্ষরমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।  

তিনি বলেন,  আমার কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই, আত্মীয় পরিজনকে হারিয়ে আমি রাজনীতি করছি শুধুমাত্র জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য, এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এদেশের সাধারণ মানুষ যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন, পায় ক্ষুধা, দারিদ্য, বঞ্চনা থেকে মুক্তি পায়, তাদের জীবনটাকে আরও উন্নত করা, সমৃদ্ধ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
 
বাঙালি জাতির দুই মাহেন্দ্রক্ষণে আওয়ামী লীগ সরকারই পারবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের দিকে , সম্মৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে। এই সময় স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি ক্ষমতায় থাকলে তা হবে গ্লানিকর। আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেব- এটা আমাদের অঙ্গীকার।

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শিল্পোন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার রয়েছে ইশতেহারে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, মাদককের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণাও রয়েছে ইশতেহারে।

সরকারে টানা ১০ বছরের মেয়াদে গৃহীত পদক্ষেপও তুলে ধরা হয়েছে ইশতেহারে। এবারের ইশতেহারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশেষ উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। সেটি হলো ‘এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণি আছে তারা চাকুরি না পায় বা কাজ না পায়।’

বঙ্গবন্ধুর এই উক্তিকে সামনে রেখেই ২১টি বিষয় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। সেগুলো হলো আমার গ্রাম- আমার শহর: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন; লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দারিদ্র্য নির্মূল; সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সকল স্তরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; ব্লু-ইকোনমি, তথা সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবাসী কল্যাণ কর্মসূচি এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।

ইশতেহারে রয়েছে ৭টি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ইশতেহারের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে পটভূমি, তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য ও আগামী মেয়াদের জন্য পরিকল্পনা, চতুর্থ অধ্যায়ে দেশের অর্থনীতির চিত্র, পঞ্চম অধ্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ভবিষ্যৎ দিক দর্শন এবং সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান। এসব অধ্যায়ের মধ্যে আবার উপ-অধ্যায়ে ভাগ করে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়।

ইশতেহারে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনসহ জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তারা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবার্ষিকী পালনের অঙ্গীকারও রয়েছে।

এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত রয়েছেন।

ইশতেহারে কর্মসংস্থানের জন্য জেলা/উপজেলা কলকারখানা গড়ে তোলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী আগামী ৫ বছরে ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে যাবে।

ইশতেহার ঘোষণায় শেখ হাসিনা বলেন, সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানতম শক্তি হচ্ছে যুবশক্তি। দেশের এই যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রুপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এই শ্লোগান বাস্তবায়নে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী পর্যায় ক্রমে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।

নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে আগামী ৫ বছরে এক কোটি ২৮ লাখ কর্মসৃজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রতি উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে এক হাজার যুব/যুব মহিলার জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় জীবনে সব স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর বলেও জানান শেখ হাসিনা।

এ সময় আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আকুল আবেদন জানান দলের সভাপতি।  তিনি বলেন, ‘আপনারা নৌকায় ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেব।’ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার প্রতীক নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনবে বলে নিজের বিশ্বাসের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!