• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেখানে আ.লীগের চেয়ে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ঐক্যফ্রন্ট


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮, ০৯:৪৯ পিএম
যেখানে আ.লীগের চেয়ে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ঐক্যফ্রন্ট

ঢাকা: দিন নয় নির্বাচনের এখন ঘণ্টা গণনা শুরু হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পরই অনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময় শেষ হবে। দেশের প্রধান দুই জোটের প্রচারণার হিসেব করলে আক্ষরিক অর্থে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে। কারণ গত ১০ অক্টোবর থেকে অনুষ্ঠানিক প্রচারণায় সময় কার্যত মাঠেই নামতে পারেনি প্রধান এই বিরোধী জোট। এমনকি বিভিন্ন আসনে তাদের প্রর্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা যাচ্ছে না।

তবে ভার্চুয়াল জগতে আওয়ামী লীগের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও ও পোস্টার বানিয়ে তারা প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রার্থীরা স্বশরীরে মাঠে না থাকলেও নিজ নাম ও এলাকার নামে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ খুলে পোস্টার আপলোড করে প্রচারণায় নেমেছে। সেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধানের শীষ ও নিজ প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। এখানেই শেষ নয় এলাকাভিত্তিক ভোটারদের কাছে এসএমএস ও রেকডিং কলের মাধ্যমে নিজ প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন।

এদিকে মহাজোটের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে যেমন সরব ভার্চুয়াল জগতেও তারা কম নয়। বিএনপি জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইল অপারেটর ব্যবহার করে প্রচারণা চালচ্ছেন। প্রার্থীরা কণ্ঠশিল্পীদের দিয়ে নিজ নিজ ও আওয়ামী লীগের সমন্বিত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে গান রেকর্ড করে ভোট চাচ্ছেন। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ যাচাই করে দেখা যায় যে। তারা পাল্টাপাল্টি পোস্ট দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত Bangladesh Nationalist Party - BNP বিএনপির ভেরিফাইড পেজ হ্যাকড হয়। পরে অবশ্য পেজটি উদ্ধার করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই তর্কাতর্কিতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ যদি বিএনপি জামায়াতের ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরের বিভিন্ন সহিংসতার কথা তুলে ধরে কোনো ভিডিও বানিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর পাল্টা- আওয়ামী লীগের গত নয় বছরের সময়ে যেসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকণ্ড ঘটেছে তার ওপর ভিডিও করেছে।

আওয়ামী লীগের একটি পোস্টে দেখা যায়- আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কষ্ট করে কন্যার চুল আঁচড়ে দিচ্ছেন বাবা। কেন এই কষ্ট? একটু খেয়াল করতেই দেখা গেল, বাবার হাতের আঙুলগুলো অকেজো, কুঁকড়ে গেছে। একটি চোখও অন্ধ। কী করে এমন, তার বর্ণনা ভিডিও ক্লিপে। ভিডিওটি গেল সংসদ নির্বাচনের সময় পেট্রলবোমায় আহত এক বাবার। ভিডিওটির বর্ণনায় বলা হচ্ছে এরপরও কি বিএনপি-জামায়াতকে ধানের শীষে ভোট দেয়া যায়?

পাল্টা ভিডিওতে ধানের শীষের সমর্থকরা গুম হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনদের এনেছেন ভিডিওতে। বলছেন, ‘নৌকা ভর্তি গুমের লাশ/ কোন সাহসে ভোট চাস?’ 

আওয়ামী লীগের পেজে শেখ হাসিনা বিভিন্ন জনসভার ভাষণ ও উন্নয়নের কথায় বেশি। বিশেষ করে ‘লেটস টক উইথ শেখ হাসিনা’ নামে তরুণদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথোপকথন, জনভার ভাষণ। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্লোগান ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’।

সেখানে তুলনা করা হয়েছে, বিসিএসে বিএনপি ২০০১-০৬ পর্যন্ত ১৬ হাজার ১৩৮ জন আর আওয়ামী লীগ ২০০৯-১৮ পর্যন্ত ৭২ হাজার ৪২৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া পদ্মা সেতু, বিদ্যুতায়ন, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, সমুদ্রসীমা জয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহারের কথাও উল্লেখ করেছে।

এছাড়া, শেখ হাসিনা, জুনাইয়দ আহমেদ পলক, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ বিভিন্ন ছদ্মনামে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন জরিপের কথা প্রচার করছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তৎপরতা তরুণদের লক্ষ্য করে। তারা ক্ষুদিরাম, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া তরুণদের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। 

ঐক্যফ্রন্ট মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছে। পোস্টের বার্তা ছিল এমন, ‘ধর্ম যার যার, আমাদের এই দেশটা সবার। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটাকে গড়তে ৩০ তারিখ ধানের শীষে ভোট দিই।’

ঐক্যফ্রন্ট প্রচার করছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আলোচিত স্বর্ণ বদলে গেল ব্যাংকের ভল্টে, সুনামগঞ্জ সেতুতে রডের বদলে বাঁশ, বুড়িমারী-মোংলায় কোটি কোটি টাকার ঘুষ, কয়লা গায়েব-ধামাচাপা দিতে তৎপর ছিল একটি চক্র, দুর্নীতির শীর্ষে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এসব খবর প্রচার করছে। 

তারা বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু, ছাত্রলীগের হাতুড়িপেটা থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল খাদিজাকে কোপাচ্ছে এমন খবর ও সম্পর্কিত ভিডিও প্রকাশ করে ঐক্যফ্রন্ট জানতে চেয়েছে, তরুণেরা আসলে কী চায়?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আলোচনায় আসে চার তরুণের কণ্ঠে ‘ব্যাপার না অনেক হলো, ভোটে তোমার আওয়াজ তোলো’ নামের একটি কবিতার ভিডিও নিয়ে। এরপর আসে ড. কামাল হোসেনের ‘জেগে ওঠো বাঙালি, তোমার কান্ডারি প্রস্তুত’ শিরোনামে আরেকটি ভিডিও। তারপর তারা আপলোড করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভিডিওটি।

সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রধানমন্ত্রীকে রাজা উল্লেখ করে গণসংযোগে বক্তব্য দেয়া বিষয়টি ইঙ্গিত করে ‘দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান’ পোস্টার। যেখানে বিখ্যাত হিরোক রাজার দেশে চলচ্চিত্রের একটি ভিডিও মুহূর্তে তুলে ধরা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভিডিওটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। তার বাবার মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে ফেসবুক সরগরম হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ এ নিয়ে পাল্টা ভিডিও বার্তা প্রচার করা শুরু করে। এর জবাবে আবার বিএনপি-জামায়াতের নেতা–কর্মী–সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত ২২ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা দেয়। এ খবরটি শেয়ার করতে শুরু করেন। এই তালিকায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীদের নাম আছে।

এখানেই শেষ নয় বিএনপি জামায়াতের আইটি বিভাগ ও ব্যক্তিগতভাবে ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’, ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ সহ বিভিন্ন নামে ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ খুলে প্রচারণা চালাচ্ছে।

তবে আশার কথা হলো আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে। এটাই ছিল তাদের অনুষ্ঠানিক প্রচারণার দৃশ্যত সবচেয়ে সফল একদিন। এছাড়াও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, তার কাছে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন হাজার খানেক ফোন কল আসে। যেখানে প্রার্থীরা বলেন কামাল ভাই ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ ভোট দিতে পারলে তাদের বিজয় নিশ্চিত।

সোনালীনিউজ/এআই

Wordbridge School
Link copied!