ফাইল ছবি
ঢাকা: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ২৩ মাস পূর্ণ হয়ে গেল। হামাস উৎখাত ও জিম্মি মুক্তির নামে এখনও অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার সেনারা। পুরো বিশ্ব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানালেও নেতানিয়াহু প্রশাসনকে এ গণহত্যায় নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ অবস্থায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ায় নিজেদের এই পশ্চিমা মিত্রদেরকে হুমকিও দিয়ে বসেছে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর প্রশাসন। খবর প্রেস টিভির।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্তর্জাতিক উদ্যোগকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলে আখ্যা দেন ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সা’আর। সেইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ার করেন, এ ধরনের উদ্যোগের বিরুদ্ধে ‘পাল্টা ও একপাক্ষিক’ পদক্ষেপ নেবে ইসরায়েল। যদিও কী পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
ডেনমার্ক সফরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেনের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে অংশ নিয়ে গিডিয়ন সা’আর আরও বলেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো রাষ্ট্রগুলো তথাকথিক যে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বিপজ্জনক ভুল। এ ধরনের স্বীকৃতি এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এতে ইসরায়েল একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে।
একইদিনে ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে তা বিপর্যয় ডেকে আনবে।
রোববার বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, অসলো চুক্তি অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কখনোই গঠিত হয়নি। এভাবে একপাক্ষিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে ওই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা শুধু আরও সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাকে বিপদের মুখে ফেলবে।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর কুইটোতে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কো রুবিও আরও বলেন, আমরা সব দেশকে স্পষ্ট করে বলেছি—এই স্বীকৃতির ব্যাপারটা ভুয়া; এটা বাস্তব নয়। যদি এটা করা হয়, তাহলে আরও সমস্যা তৈরি হবে।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক দেশ ছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব। সে সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দেন, ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে তার দেশ।
এরপর ব্রিটেন জানায়, ইসরায়েল যদি অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি চালু না করে, তাহলে তারাও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে। এরপর বেলজিয়াম, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও ফ্রান্সের উদ্যোগের সঙ্গে একজোট দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
এ অবস্থায় ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি আটকাতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে গত ৩০ আগস্ট ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও আরও ৮০ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশটি।
এসআই







































