• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

২০২৪ সালের

৫ই অগাস্ট ঢাকার এক ঐতিহাসিক সকাল


নিউজ ডেস্ক আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
৫ই অগাস্ট ঢাকার এক ঐতিহাসিক সকাল

২০২৪ সালের ৫ই অগাস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নাটকীয় ও টালমাটাল দিন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঘোষিত ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে টানটান উত্তেজনা। আর একদিকে সরকারের ঘোষিত অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ পরিস্থিতিকে করে তোলে আরও জটিল।

সকালের প্রথম আলো ফোটার আগেই ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে—মহাখালী, শাহবাগ, গুলশান, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, বনানী, রামপুরা, কারওয়ান বাজার—পসরা সাজায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাঁটাতারের ব্যারিকেড, রাস্তার চেকপোস্ট, সেনা ও পুলিশের কড়া অবস্থান—সবকিছু মিলিয়ে রাজধানীর চিত্র ছিল একেবারেই যুদ্ধকালীন।

বিবিসি বাংলার রিপোর্টাররা জানাচ্ছিলেন, কারফিউ পাস থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ পড়ছিলেন ঘন ঘন জিজ্ঞাসাবাদের মুখে। রাজধানীতে চলাচলরত একমাত্র যানবাহন ছিল কিছু অ্যাম্বুলেন্স ও সংবাদমাধ্যমের গাড়ি।

সকাল থেকেই আমরা বিভিন্ন মোড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের মুখোমুখি হচ্ছিলাম। বনশ্রীতে পৌঁছেই গুলির শব্দ শুনতে পাই, বলছিলেন বিবিসি বাংলার এক সাংবাদিক।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মূলত ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ হবার কথা থাকলেও তা একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করা হয় ঘোষণা।

তবে, সরকার ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় হঠাৎ ঘোষণা দেয় অনির্দিষ্টকালের কারফিউ, বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।

সকাল ১০টার পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, গৃহবধূসহ সর্বস্তরের মানুষ।

উত্তরায় বিএনএস সেন্টার থেকে শুরু হয় মিছিল। সেনাবাহিনীর অনুরোধ উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে চলে গণভবনের দিকে। একপর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা অগ্রসর হয়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার রাস্তায় মিছিল বাড়তে থাকে। রামপুরা, বনশ্রী, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা, গুলশান—প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই জনতার ঢল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশও সকালে বৃষ্টির মধ্যেই র‍্যালি বের করে। শাহবাগ মোড়ে শুরু হয় টিয়ার শেল, গুলি, সাউন্ড গ্রেনেডের হামলা।

দুপুর ২টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান টেলিভিশন ভাষণে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, "দেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছে।" এরপর থেকেই ঢাকায় শুরু হয় বিজয়ের উল্লাস।

রামপুরা ব্রিজে দায়িত্বে থাকা সেনারা বিক্ষোভকারীদের জানান, "আর সামনে যেতে হবে না, সুখবর আসছে।" তখনই শুরু হয় কান্না, মোনাজাত, সিজদা—অনেকেই ধরে নেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

বিকেল ৩টার পর থেকেই গণভবন এবং তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হয়। হাজারো মানুষ ঢুকে পড়ে ভেতরে। লুটপাট, ভাঙচুর শুরু হয়। মাছ, খাবার, আসবাব—কিছুই বাদ যায়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে জাতীয় পতাকা তুলে ‘বিজয়’ ঘোষণা করেন বিক্ষোভকারীরা।

ছাত্রদের একটি অংশ অবস্থান নেয় সংসদ ভবন এলাকায়। কেউ কেউ অধিবেশন কক্ষে ঢুকে ছবি তোলেন। অনেককে দেখা যায় সোফায় বসে শ্লোগান দিচ্ছেন, কেউবা ক্যামেরায় ভিডিও করছেন তাদের ‘অধিকার ফিরে পাওয়ার মুহূর্ত’।

একই সময়ে থানা ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়গুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেও চলে হামলা—প্রতীকীভাবে ভেঙে ফেলা হয় বর্তমান শাসন কাঠামোর স্তম্ভ।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। ১৫ বছরের শাসনের অবসান, সেনাবাহিনীর ভূমিকা, ছাত্র আন্দোলনের বিস্তার—সব মিলিয়ে এই দিনটি দীর্ঘদিন মনে রাখবে জাতি।

সূত্র: বিবিসি

ওএফ

Wordbridge School
Link copied!