ঢাকা: বিশ্বে শিক্ষার হার বাড়ছে ক্রমবর্ধমান হারে। ইউনেস্কোর দাবি অনুযায়ী, বিশ্বে গড় সাক্ষরতার হার এখন প্রায় ৮৪ শতাংশ। প্রতি বছর আশাব্যঞ্জক হারে এর পরিমাণ বাড়ছে। তবে এই আশার বাণীর মধ্যেও একটি হতাশার খবর হলো- বিশ্বের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে শিক্ষার আলো পৌঁছালেও সেসব এলাকায় শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসার খুব বেশি নেই বললেই চলে।
ফলে স্কুলগামী শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হতে হচ্ছে। শিশুরা স্কুলে যেতে কোথাও নদী পাড়ি দিচ্ছে, কখনও শুধু এক টুকরো কাঠের ভেলায়, আবার কোথাও পাহাড় ডিঙিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। আরো অনেক রকম ঝুঁকি মধ্যেও স্কুলে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়া নজির আছে আমাদের এই বাংলাদেশেও।
এ সমস্যার সমাধান- যেমন, বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ দেয়া, ব্রিজ নির্মাণ করা, স্কুল বাস চালু করা খুব সহজ প্রক্রিয়া হলেও পর্যাপ্ত অর্থের অভাব এবং প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হয়ায় এসব কাজ করাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শিশুদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য ধারণ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বোরড পাণ্ডা ডটকম নামে একটি অনলাইন জার্নাল। সোনালীনিউজের পাঠকদের জন্য ছবিগুলো প্রকাশ করা হল-
ইন্দোনেশিয়ার কোলাকা আট্রা প্রদেশের মারকো গ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ একটি তারে ঝুলে নদী পার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। এটা শত শত শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতের একটি মাধ্যম। এতে যেমন জীবনের ঝুঁকি আছে, তেমনি অপচয় হচ্ছে সময়ও।
স্কুল তাদের অনেক দূরে। ফিলিপাইনের উত্তরপূর্ব ম্যানিলার একটি প্রত্যান্ত গ্রামে বাঁশের ভেলায় নদী পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয় শত শত কোমলমতি শিশুদের। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ম্যানিলার মোনটালবানে ক্যাসেল এলিমেনটরি স্কুলে যাচ্ছে তিন শিশু।
বন্যায় ভেসে গেছে নিজেদের বাড়ি ফেরার পথ। তাতেও বসে নেই চীনের চিয়াংসি প্রদেশের শিশুরা। স্কুল থেকে দুই শিশু ফিরছে একটি কাঠের টুকরোয় ভেসে। বাবা ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের। ক্যামেরা দেখে বেশ খুশি তারা।
সৌদি আরবের দক্ষিণে যাজান প্রদেশের শিশুরা একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিঁড়ি বেয়ে স্কুলের জন্য যাত্রা করতে দেখা যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই যাত্রা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
চীনের লিয়াংশান সিচুয়ান প্রদেশে ক্লিফ গ্রামের শিশুরা স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরছে প্লাস্টিকের মই বেয়ে। এভাবে যাওয়া ও আসার সময় প্রতিদিন নিচে পড়ে যাচ্ছে অনেকেই।
ফিলিপাইনের জাম্বাস প্রদেশের কাউয়াগ গ্রামের শিক্ষার্থীদের স্কুল যাত্রা।
ইন্দোনেশিয়ার লেবাক প্রদেশের সাংলং তাংজুং গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীরা নদীর ওপর ভাঙা ঝুলন্ত কাঠের ব্রিজ পার হচ্ছে। এটিও নিত্যদিনের স্কুলযাত্রা।
ষোড়শ শতকে নির্মিত শ্রীলঙ্কার গল দুর্গের দেয়ালের অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। আর এই ভাঙ্গা অংশগুলোতে কাঠের তক্তা বসিয়ে তার ওপর দিয়ে স্কুলে যায় শিক্ষার্থীরা।
পাঁচ ঘণ্টা দূরত্বের স্কুল তা-ও আবার পাহাড়ের গা কেটে বানানো এক ফিট প্রশস্ত রাস্তার ওপর দিয়ে যেতে হয়। চীনের গুলু গ্রামের শিশুদের এভাবে স্কুলে যাওয়াটাকে মনে করা হয় বিশ্বের সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল যাত্রা।
চীনের দক্ষিণ অঞ্চলের জাং জিওয়ান গ্রামের শিশুদের পাহাড়ের উপরে অবস্থিত স্কুলে যেতে হয় কাঠ দিয়ে সিঁড়ি বানানো পথে।
হিমালয়ের ভারতের অংশের জান্সকার নামক স্থানের স্কুলগুলোতে শিশুদের যেতে হয় হিমালয়ের বরফাবৃত পথ পাড়ি দিয়ে।
স্কুলে যেতে কলম্বিয়ার শিশুরা ৮০০ মিটার প্রশস্ত নেগ্রো নদী অতিক্রম করে ৪০০ মিটার উপরের স্টিলের তারে ঝুলে থেকে।
ইন্দোনেশিয়ার রিয়াও এর শিশুরা স্কুলে যায় ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে।
বনের ভেতর বিশালাকৃতির একেকটা গাছ। সেই গাছের শেকড় দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে অনিন্দ্য সুন্দর এক ব্রিজ। দৃষ্টিনন্দন এ পথ মাড়িয়েই প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। এ যেন ‘ভয়ংকর সুন্দর’ পথে ভারতীয় শিশুদের নিত্যদিনের স্কুলযাত্রা।
মহিষের পিঠে বসে স্কুলে যায় মায়ানমারের শিশুরা। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এটিতেই যেন আনন্দ খুঁজে বেড়ায় সেখানকার স্কুলগামী ছেলে-মেয়েরা।
একে তো ভাঙা ব্রিজ. তার উপর আবার জমে আছে বরফ। স্কুলে যাওয়ার পথে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হতে পারে কোমলমতি শিশুদের। প্রতিদিন এমন শঙ্কা নিয়েই স্কুলে যেতে হয় চীনের সিচুয়ান প্রদেশের শিশুদের।
ভারতের দিল্লির শিশুদের স্কুলে যেতে হয় দুই চাকার ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলযাত্রাতেও মুখে হাসি লেগে আছে এসব শিশুদের।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত চরগুলোতে স্কুলের সংখ্যা খুবই নগন্য। ফলে শিশুদের স্কুলে যেতে হলে নৌকায় করে অন্যগ্রামে যেতে হয়, যা শিশুদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
ভিডিওতে দেখুন:
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই
আপনার মতামত লিখুন :