• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের হুমকি: রোহিঙ্গা জনপদে যেতে পারবে না মার্কিন মন্ত্রী


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭, ০৮:৫৬ পিএম
মিয়ানমারের হুমকি: রোহিঙ্গা জনপদে যেতে পারবে না মার্কিন মন্ত্রী

ঢাকা: ক্রমেই উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ছে মিয়ানমার সরকার। বিশ্ব জনমতকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে রোহিঙ্গা নিধনের কাজ করছে। এবার আরও একধাপ এগিয়ে গিলে ঘোষণা দিলো, মার্কিন মন্ত্রীকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় যেতে দেয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাট্রিক মার্ফি আগামী সপ্তাহে মিয়ানমার সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে শুক্রবার(১৫ সেপ্টেম্বর) বার্মিজ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাকে রোহিঙ্গা এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

মিয়ানমারের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজধানী নেপিডো’তে দেশটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন প্যাট্রিক মার্ফি। আগামী মঙ্গলবার(১৯ সেপ্টেম্বর) রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া সু চি’র ভাষণও তিনি দেখার সুযোগ পাবেন।

রাখাইনের রাজ্যসচিব টিন মং সুই রয়টার্স’কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়ে-তে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেখানে তিনি রাখাইনের গভর্নর ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে তাকে রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় যেতে দেয়া হবে না।

এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জাও হাতা জানান, তার দেশের ১৭৬টি রোহিঙ্গা গ্রাম এখন পুরোপুরি জনশূন্য। এসব গ্রাম ছেড়ে সবাই পালিয়ে গেছেন। এটা মিয়ানমারের মোট রোহিঙ্গা গ্রামের ৪০ শতাংশ। এছাড়া অন্তত ৩৪টি গ্রাম প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

চলতি বছরের আগস্টে ৪৭১টি রোহিঙ্গা গ্রামকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ শুরু করে বর্মী সেনারা। এর মধ্যে ১৭৬টি গ্রামেই এখন আর কোনও রোহিঙ্গার অস্তিত্ব নেই। সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে এদের অধিকাংশই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।

মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থীদের অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান বাংলাদেশে কর্মরত ৪০টি দেশের কূটনীতিকরা। এ সময় তারা নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের গ্রামগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন।

সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর উদ্যোগে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ ৪০টি দেশের রাষ্ট্রদূতরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যান। সকালে তারা কক্সবাজারে পৌঁছানোর পরে তাদের উখিয়া উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা নো ম্যানস ল্যান্ডে অপেক্ষারত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন।

দুপুর দেড়টার দিকে কূটনীতিকরা যখন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ শেষ করে গাড়িতে উঠছিলেন ঠিক তখনই নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ও ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে কূটনীতিকদের গাড়ি বহর থামিয়ে তাদেরকে এ দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতি চাক্ষুষ দেখে অবাক ও হতভম্ব হয়ে পড়েন তারা। সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনেককেই এ দৃশ্যের ছবি তুলতে ও ভিডিও করতে দেখা যায়।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী অপপ্রচারের চেষ্টা করছে যে, রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেরাই নিজেদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের পৃষ্ঠপোষক মিডিয়া হাউজ ইলেভেন একাধিক ছবিসহ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জো টো টুইটারে এক পোস্টে বলেন, ‘এটি বাঙালিদের ফটো। তারা নিজেদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগাচ্ছে।’

বিবিসি’র জোনাথন হেড সম্প্রতি সরকারিভাবে রাখাইনে সফর করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের একটি বৌদ্ধ মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন ভিক্ষু জানান, মুসলিমরা তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। এমন কয়েকটি ছবিও আমাদের দেয়া হয়। এতে দেখা যায়, টুপি পরা একজন ব্যক্তি ঘরে আগুন দিচ্ছেন। তার পাশেই একজন নারী তলোয়ার উঁচিয়ে নাটকীয় ভঙ্গি করছেন। পরে আমি ওই নারীকে একটি হিন্দু ক্যাম্পে দেখতে পাই। সেখানে তিনি উত্তেজিতভাবে বলছিলেন, রোহিঙ্গারা তার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।’

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যু মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হং লিয়াং। মঙ্গলবার মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আই-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা জানান। এ সময় তিনি জনগণের জন্য বার্মিজ সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, রাখাইনের সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে চীনের অবস্থান স্পষ্ট। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানকে আমরা দৃঢ়ভাবে স্বাগত জানাই।

বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বার্মিজ সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের তাণ্ডবের মুখে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় চীন। বরং দেশটি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত জাতিগত নিধনযজ্ঞকে জঙ্গিবিরোধী অভিযান হিসেবে আখ্যায়িত করে একে স্বাগত জানিয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!