• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিচু গ্রাম আখাউড়া


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মে ২৪, ২০২১, ০৩:৪১ পিএম
লিচু গ্রাম আখাউড়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : মধু মাসের রসালো ও মিষ্টি ফল লিচু। গ্রাম জুড়েই রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য লিচু বাগান। প্রতিটি বাগানের গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। যেদিকেই চোখ যায় লাল রঙের সমাহার। এমন মন মাতানো দৃশ্য চোখে পড়বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায়।

এ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের শতাধিক চাষী লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতি উন্নয়নে যতেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এখানকার লিচু রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে এর কদরও বেশী। লিচু চাষে শতাধিক মানুষের ভাগ্য ফিরেছে ।

ইতিমধ্যে স্থানীয় বাজারে লিচু বিকিকিনি জমজমাট হয়ে উঠেছে। বিকিকিনিতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। আবহাওয়ার কারনে এ মৌসুমে লিচুর ফলন কিছুটা কম হলেও বিক্রিতে ভাল দাম পাওয়ায় চাষিরা খুবই খুশি।

মিষ্টি ও রসালো লিচুর ভরা মৌসুমে এ উপজেলায় বর্তমানে চলছে উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্তের মানুষ আসছেন লিচু কিনতে। এখান থেকে লিচু কিনে পাইকাররা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। খুচরায় প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে উত্তর, দক্ষিন ও মনিয়ন্দসহ ৩ ইউনিয়নে অন্তত ৩০টি গ্রামে লিচু চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে অন্ত‍ত ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবে বলে কৃষি অফিস জানায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার দূর্গাপুর, উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর, চানপুর, আমোদাবাদ, রাজাপুর, আনোয়ারপুর, মনিয়ন্দের ঘাঘুটিয়া, খারকোট, মিনার কোট নিলাখাতসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। লিচু গাছ থেকে পেড়ে বাজার জাত করতে নারী পুরুষসহ সব বয়সের লোকজন এ কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। কেউ কেউ আবার দিনমজুর হিসাবেও এখানে কাজ করছেন। এখানে দেশীয়,চাইনা,পাটনাই ও বোম্বাই জাতের লিচু চাষ হয় বেশী। এ লিচুর বৈশিষ্ট্য হল উৎপাদন বেশী হয় ও পোকা মাকড়ের আক্রমন তুলনামূলক কম হয়।

এদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন সড়ক পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদী, কসবা, কুমিল্লা, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা নিয়ে লিচু বিক্রি করছেন। লিচু চাষে কম শ্রমে বেশী লাভ হওয়ায় ধান জমি গুলো লিচু বাগানে রুপান্তরিত হচ্ছে বলে চাষিরা জানায়।

লিচু কিনতে আসা পৌর শহরের মসজিদ পাড়া এলাকার মো. নিজাম মিয়া ও তার স্ত্রী বলেন, প্রতি বছরই সময় সুযোগ হলে এ মৌসুমে আজমপুর এলাকায় লিচু বাগান দেখতে আসা হয়। সেই সাথে কিছু লিচু কেনা হয়। এখানকার লিচুর স্বাদই আলাদা।

শান্তিনগর এলঅকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ দিন তিনি প্রবাসে ছিলেন। গত বেশ কয়েক দিন আগে দেশে এসেছেন। তাই স্ত্রীকে নেয়ে আজমপুর এলাকায় এসেছেন। লিচুর ভরা মৌসুমে গাছে লিচু দেখতে এখানে আসা। তাই লিচু ও কেনা হয়। এখানকার লিচু খুবই ভালো দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও খুব মজা। এর ভেতরে মাংস বেশি এবং বিচি ছোট হওয়ায় কেনা হয়েছে।

এখানকার এমন কোন বাড়ি নেই যার আঙ্গিনায় ৮-১০ টি লিচু গাছ নেই। গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙ্গিন হয়ে আছে পুরো এলাকা। গ্রাম জুড়ে এখন গাছ ভর্তি লিচু আর লিচু । থোকায় থোকায় বাহারি লিচুতে যেন সবার মন কাড়ছে। সেই সাথে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট পাখিদের কিচির মিচির শব্দে এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় একাধিক লিচু চাষি জানায়, এ মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লিচুর ক্ষতি হয়। গত বছরের চাইতে লিচু ফলন কম হলেও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

লিচু চাষি মো. হারুণ মিয়া বলেন, বাড়ি সংলগ্ন অন্যান্য ফল গাছের পাশাপাশি তার প্রায় ৩০ টি লিচু গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি গাছে লিচু এসেছে। স্থানীয় বাজারে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে বেচাকেনা। এ পযর্ন্ত ১২ হাজার টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে বলে জানায়। গত বছর এ বাগান থেকে ১লাখ টাকার উপর লিচু বিক্রি হয়েছে। এবার বৃষ্টিপাতের অভাবে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তারপরও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ও অন্যান্য খরচ বাদে লিচু থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকার উপর আয় হবে বলে জানায়।

লিচু চাষি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ২টি বাগানে দেশীয়,চাইনা বোম্বে জাতের ৩৫ টি লিচু গাছ রয়েছে। অন্য বছরের চাইতে এ মৌসুমে ফলন কিছুটা কম হলে ও বাজারে বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকার মো. সিরাজ মিয়া ও রুবেল মিয়া বলেন, মৌসুমি ফল লিচু এখান থেকে ক্রয় করে দীর্ঘ ৮-১০ বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তারা বিক্রি করছেন । এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় বিক্রিতে ভালো লাভ হয় বলেন জানায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আবহাওয়ার কারণে লিচুর কিছু ক্ষতি হলে ও শেষ পযর্ন্ত তুলনামুলক ভাবে ফলন ভালো হয়েছে। বাজারে চাষিরা বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। এ মৌসুমে উপজেলায় ৭০-৮০ লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে সার্বিক ভাবে চাষিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!