• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গাজার গৃহহীনদের আজাব হয়ে এলো আরেকটি শীত


ফিচার ডেস্ক নভেম্বর ২৭, ২০১৬, ০৬:১৬ পিএম
গাজার গৃহহীনদের আজাব হয়ে এলো আরেকটি শীত

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজাতেও জেঁকে বসেছে ভয়ঙ্কর শীত। ইসরায়েলি অবরোধের শিকার এই উপত্যকাটির অস্থায়ী বাসিন্দাদের কাছে শীত মানেই এক ধরনের ‘আজাব’। গাজারই একটি ছোট্ট এলাকা খুজ্জা। এখানকার বাসিন্দা ইউসুফ আল-নাজ্জারের অস্থায়ী বাড়িটি বর্ষায় যেমন প্লাবিত হয়, তেমনি ওই বাড়ি দিয়ে তারা রক্ষা পায় না শীতের তীব্রতা থেকেও।

২০১৪ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অন্যায় যুদ্ধ নাজ্জারের মতো খুজ্জার আরো অনেক পরিবারকে করেছে গৃহহীন। কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থ সহায়তায় তাদের জন্য ৭০টি অস্থায়ী টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এসব ঘর শীতের ভয়াবহতা রুখতে ব্যর্থ।

তিন সন্তানের জনক ৪৭ বছর বয়সী অন্ধ নাজ্জার বলেন, ‘আমরা খুবই ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করি। এ এলাকাটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে নিচু। বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আমাদের এই কাফেলাটির স্থায়ী কোনো ঘরবাড়ি নেই। বারবার এখানে সেখানে স্থান পরিবর্তন করতে হয়। বাইরে থেকে আসা শীতের তীব্র বাতাস এখানে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।’

আগুন জ্বালিয়েও শীত নিবারণের সুযোগ নেই সেখানে। নাজ্জার জানান, গত বছর তারা এখানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন, আগুন জ্বালানো ওই এলাকায় নিরাপদ না। কারণ গাজায় আগুন জ্বালালে তাকে সন্দেহের চোখে দেখে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। হয়তোবা এর জের ধরে হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে।

শীত এবং আর্দ্র আবহাওয়া খুজ্জা এলাকার মানুষগুলোর জন্য সৃষ্টি করেছে ভয়ানক স্বাস্থ্য সমস্যাও। ফিলিস্তিন মেডিকেল রিলিফ সোসাইটির (পিএমআরএস) চিকিৎসক মোহাম্মদ মোহান্না বলেন, ‘এখানকার মানুষের স্বাস্থ্য সব সময়ই খারাপ থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি খারাপ থাকে শীতের সময়ে।’

প্রতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনের উত্তর এবং মধ্য অঞ্চলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেন মোহান্না। তিনি জানান, তার দেখা অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি খুজ্জাতে। এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা রোগজীবাণু। এর আগে বন্যায় শৌচাগারের পাইপগুলো ভেঙে যাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।

মোহান্না বলেন, ‘শীতের শুরুতেই টনসিল, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি হয় নানা রকমের জ্বর এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় বিভিন্ন চর্মরোগ।’

এক সৌভাগ্যবান বাসিন্দার কথা স্মরণ করে তিনি জানান, ওই লোক একটি ঋণ জোগার করতে পেরেছিলেন এবং একটি সাহায্য সংস্থার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেয়েছিলেন। মোহান্নার ভাষায়, ‘আমি চলতি সপ্তাহে তার বাড়ি গিয়েছিলাম। সেখানে কোনো আসবাবপত্র নেই, কোনো ওয়ালপেপার নেই। স্রেফ একটা কংক্রিটের তৈরি বাক্স। অথচ তার কাছে তার বাড়িটি একটি প্রাসাদ। এই শীতে সে কিছুটা হলেও ভালো থাকতে পারবে।’

ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা তহবিল (ইউএনআরডব্লিওএ) থেকে সাহায্য পেয়ে অনেকে স্থায়ী বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলেও খুব কঠিন হয়ে যায় গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের কারণে। নির্মাণ সামগ্রী ঢুকতে পারে না সেখানে। তাছাড়া ইউএনআরডব্লিওএ’র আছে অর্থ সঙ্কট। ইউএনআরডব্লিওএ’র মুখপাত্র ক্রিস্টোফার গানেজ জানান, ইসরায়েলের অবরোধ এবং আর্থিক সঙ্কটের কারণে যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া বাড়িগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয় না। ধ্বংস হওয়া ১০ হাজার বাড়িঘরের কোনো বাসিন্দাকে এখনো কোনো সাহায্য দেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে এখনো নিজেদের বাড়িগুলো পুননির্মাণের স্বপ্ন দেখে খুজ্জার গৃহহীন পরিবারগুলো। তাদের আশা চলমান সঙ্কট একদিন শেষ হবে। তারা আবার ফিরে যাবেন তাদের স্বাভাবিক জীবনে। ফিরে পাবেন স্বপ্নের গাজাকে।

সোনালীনিউজ/ ঢাকা/ আরএস

Wordbridge School
Link copied!