• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইডেনকে ভুলে সামনে তাকিয়ে মাশরাফি বাহিনী


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৭, ২০১৬, ১০:৫৩ পিএম
ইডেনকে ভুলে সামনে তাকিয়ে মাশরাফি বাহিনী

স্পোর্টস ডেস্ক

পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের হতাশাকে পেছনে ফেলেই বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরুর বিমানে চেপেছিল বাংলাদেশ দল। সুপার টেনের শুরুতে হোঁচট খেলেও লক্ষ্য এখনও স্থির, দৃষ্টি নিবদ্ধ সেমি-ফাইনালে।

পাকিস্তান ম্যাচের উইকেট পড়তে না পারার হতাশা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পোড়াচ্ছিল পরদিনও। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেই খোলামেলা বলে দিয়েছিলেন, উইকেট ঠিকমত বুঝতে ভুল করেছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরুগামী বিমানে চড়ার আগে সহযাত্রী সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আড্ডাতেও বারবার উইকেটের কথা বলছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

উইকেটে নানা জায়গায় ছিল ঘাসের ছোঁয়া। মরা ঘাস নয়, সবই ছিল জীবন্ত সবুজ ঘাস। কিছু জায়গা আবার ছিল একদমই ন্যাড়া, কোথাও কোথাও বাদামী। মাশরাফির ধারণা ছিল, উইকেটে বল একটু হলেও ধরবে। ১৪০ থেকে ১৫০, সর্বোচ্চ ১৬০ রানের আশেপাশে কোনো রান তাড়ার ভাবনা ছিল মাশরাফিদের মাথায়।

খেলা শুরু হওয়ার পর খুব দ্রুতই ধাক্কা খায় দল। ওই ঘাসের ছোঁয়া কেবল উইকেটকে জমাট রাখার জন্যই। বরং দারুণভাবে ব্যাটে এসেছে বল, একটুও থেমে আসেনি। নন্দনকাননের উইকেট সত্যিকার অর্থেই ছিল ব্যাটিং স্বর্গ। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও নিজেদের অননুমেয় চরিত্র আরেকবার ফুটিয়ে তোলার জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই ম্যাচকেই।

কথার সঙ্গে মেশে ভাবনা। আগের রাতের টুকরো ছবিগুলোও হয়ত ভাসতে থাকে চোখের সামনে। খানিকটা আনমনা হয়ে যান মাশরাফি; সম্বিত ফেরে দ্রুতই। টুর্নামেন্টে সামনের পথচলার প্রসঙ্গ উঠতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক বলে ওঠেন, সেমি-ফাইনালের আশা ছাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। কালকের ম্যাচের হতাশা আমরা কলকাতায়ই ফেলে যাচ্ছি। আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই আমাদের। আশা করি বেঙ্গালুরুতে ভালো করতে পারব।

দলের ম্যানেজার, বিসিবি পরিচালক ও সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন পাশ থেকে যোগ করলেন, এই গ্রুপ নিয়ে আসলে শেষ কথা বলে কিছু নেই। যে কোনো দল যে কাউকে হারাতে পারে। অনেক হিসাব নিকাশের বাকি আছে এখনও। আমাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হার থেকেও এক রকমের অনুপ্রেরণা খুঁজে নিচ্ছেন মাশরাফি। নিউজিল্যান্ড ১২৬ রান করার পরও ভারত এভাবে হারবে, কে ভেবেছিল। আমরা হয়ত আরেকটু রান কম দিলে আর নিজেরা কিছু রান বেশি করলে আরও ভালো হতো। তবে এই গ্রুপে অনেক নাটকীয়তার বাকি আছে এখনও।

বিমান্দবন্দরে ক্রিকেটারদের চোখে-মুখে ছিল ১০ দিনের মধ্যে ৫টি ম্যাচ খেলা ও ভ্রমণের ক্লান্তির ছাপ। তবে মজা, দুষ্টুমি, খুনসুটিও ছিল যথারীতি। আগের দিনের হারের হতাশাটাকে সত্যিকার অর্থেই অতীত করে দেওয়ার ইঙ্গিতটাও ফুটিয়ে তুলল ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা।

প্রমাণ মিলল মুখের ভাষাতেও। এই যেমন গত কদিনে দলের সফলতম পেসার আল-আমিন হেসেন। বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দরে নেমে লাগেজ বেল্টের পাশে অপেক্ষা করার সময় শোনালেন তার ইডেন অভিজ্ঞতা।

আমার তো সবার আগে মনে পড়ে ছক্কাটি। প্রথম বলেই ছক্কা হজম করতে হলো। ওই শটের পর পরই আমার মনে হয়েছে ইডেনে বল ডেলিভারিতে ছক্কা খেলাম, জীবনে হয়ত ভুলব না! মজার রেশ থাকতে থাকতেই অবশ্য আল আমিনের কথায় ফুটে উঠল দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। ‘কামব্যাক’ শব্দটি কারও কাছে শুনে যেন কেড়ে নিলেন মুখের কথা।

কামব্যাকের কিছু তো দেখি না। এমন কিছু তো হয়নি, স্রেফ দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হেরেছি। একটি-দুটি ম্যাচ হেরে ছন্দ পুরোপুরি চলে যায় না। তাসকিন আহমেদ অবশ্য কিছুটা দুর্ভাবনায় আছেন নিজেকে নিয়ে। বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে বুধবার সকালেই দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, পাকিস্তান ম্যাচে খেলেছেনও। পরীক্ষার দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে যে কোনো দিন চলে আসতে পারে ফল। টেনশনটা লুকালেন না তাসকিন।

আমার বিশ্বাস, সব ঠিকই আছে। তারপরও কিছুটা টেনশন তো থাকেই, না চাইলেও মনে ভাবনা আসে। তবে দলের প্রসঙ্গ উঠতে চনমনে তাসকিনও। একটা বাজে দিন গেছে, ক্রিকেটে এটা হতেই পারে। এর আগে আমরা যেভাবে খেলছিলাম, সেভাবে খেলতে পারলে ভালো কিছু করা সম্ভব। মাশরাফি অবশ্য কিছুটা চিন্তিত বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের মাঠ ও উইকেট নিয়ে। উইকেট এখানে কলকাতার চেয়েও আরও ব্যাটিং উপযোগী হতে পারে। আর মাঠ আকারে ছোট। মাশরাফির জানা মতে, সবচেয়ে বড় সীমানাও এখানে মাত্র ৬৮ মিটার! অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পাওয়ারফুল ব্যাটিং লাইনআপের সঙ্গে খেলতে হবে এখানেই।

চ্যালেঞ্জ তাই সামনে ভীষণ কঠিন। তবে চ্যালেঞ্জ কঠিন বলে জিতলে রোমাঞ্চটাও বেশি। সেই রোমাঞ্চের স্বাদই পেতে চান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। লাগজে হাতে বেরিয়ে যেতে যেতে সৌম্য সরকার যেমন বললেন, লক্ষ্য তো অবশ্যই সেমি-ফাইনাল। আর কিছু ভাবছি না আমরা।


সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!