• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংবর্ধনায় সিক্ত নারী ফুটবলাররা


ক্রীড়া প্রতিবেদক জানুয়ারি ১২, ২০১৭, ০৭:২৪ পিএম
সংবর্ধনায় সিক্ত নারী ফুটবলাররা

ঢাকা: সব হতাশার মাঝেও থাকে আশা, রাগ বিরাগের মাঝেও যেমন লুকিয়ে ভালবাসা। আধার রাতের শেষেই আসে ভোর শঙ্কা কিসের আধার দেখে খুলবে আলো দোর!!!! দেশের ফুটবলে চরম হতাশার মাঝে আলোর প্রদীপ নারী ফুটবল। বছরজুড়ে দেশবাসীকে শুধু হতাশই করেছে মামুনুল-এমিলিদের জাতীয় ফুটবল দল। তবে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছে নারী ফুটবলাররা। গত বছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে জয় ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে তারা।

সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসরে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে ৩-১ গোলে হেরে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রানার্স-আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে মেয়েরা। সেই সাফল্য ধরে রাখতে নারী ফুটবল দলের জন্য এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। ওয়ালটনের পৃষ্ঠপোষকতায় বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অডিটোরিয়ামে এই সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় জাতীয় মহিলা দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়, কোচ, সহকারী কোচ, ম্যানেজার, ডাক্তার ও কর্মকর্তাকে ওয়ালটন গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি করে ওয়ালটন এলইডি টিভি দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও দক্ষিণ এশিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের স্পোর্টস ডিরেক্টর দিল মোহাম্মদ, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের স্পোর্টস এন্ড ওয়েলফেয়ার বিভাগের প্রধান এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন), বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের উইমেন্স উইং এর চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী, সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগসহ অন্যান্যরা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এক বক্তব্যে মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘এমন একটি জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ওয়ালটন গ্রুপকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেই ২০০৮ সাল থেকে ওয়ালটন গ্রুপ আমাদের নারী ফুটবল দলের সঙ্গে কাজ করছে। আজও তারা আমাদের পাশে রয়েছে। ওয়ালটন গ্রুপকে আমরা যখন যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই পাশে পেয়েছি। ওয়ালটন এভাবে মেয়েদের সংবর্ধিত করায় আমরা ভীষণভাবে গর্বিত।’

বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘ওয়ালটন গ্রুপকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ। এই নারী ফুটবলারদের নিয়ে কিরণ আপা অনেক পরিশ্রম করেছেন। সেই পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছি আমরা। যারা ভারতের মতো দলের বিপক্ষে দারুণ খেলে রানার্স-আপ হয়েছে তাদের জন্য অকৃত্রিম ভালোবাসা। আজ আমাদের আনন্দের দিন, সম্মানের দিন, উৎসবের দিন। আর যারা এই আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ।

আসলে ফুটবল পিছিয়ে যায়নি। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মক কাপে আমরা প্লেট পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সাফে ভারতে রানার্স-আপ হয়েছি। ঘরের মাঠে অনূষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আপনারা আমাদের পাশে থাকলে ফুটবল আরো এগিয়ে যাবে। ওয়ালটন গ্রুপ সব সময় আমাদের পাশে থাকায় তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।’

ওয়ালটন গ্রুপের এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন) বলেন, ‘ওয়ালটন গ্রুপ শুধু ফুটবল নয়। ক্রিকেটের সঙ্গেও নিয়মিত কাজ করছে। আজ থেকে কক্সবাজারে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের ওয়ানডে সিরিজের টাইটেল স্পন্সরও ওয়ালটন। ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা গর্বিত। সাফে বাংলাদেশ দল যখন যায় তখন কেউ সেমিফাইনালের বেশি আশা করতে পারেনি। কিন্তু একমাত্র আমি সেদিন বলেছিলাম তরুণদের নিয়ে গঠিত এই দল ফাইনাল খেলবে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ফাইনালে দারুণ খেলে রানার্স-আপ হয়েছে। এ জন্য আমরা ওয়ালটন পরিবার গর্বিত। নারী ফুটবলের সঙ্গে আমাদের এই পথচলা এখানেই থেমে যাবে না। ভবিষ্যতেও আমরা নারী ফুটবল দলের সঙ্গে কাজ করব।’

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার, এমপি বলেন, ‘সাফে দারুণ খেলে রানার্স আপ হয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল সম্মান নিয়ে এসেছে, আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে, বাংলাদেশের মাথা উঁচু করেছে তাদের সবাইকে আমার মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ভারতের মাটিতে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। অত্যন্ত ভালো ফুটবল খেলেছে। তবে আমি মনে করি না বাংলাদেশ হেরেছে। ম্যাচে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয় তার সবগুলো সঠিক থাকে না। আপনারা জানেন ফাইনালের সবগুলো সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। সেগুলো সঠিক হলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হতাম।

ফুটবল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দর্শক হয় না বলে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে গেছে। গ্রামাঞ্চলে এখনো ফুটবল খুবই জনপ্রিয়। তবে আমাদের সবাইকে মিলে ফুটবলকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়ালটন গ্রুপ সব ধরণের খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষক করে ক্রীড়াঙ্গনে এগিয়ে নিচ্ছে। ওয়ালটন আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান। তারা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আসলে ওয়ালটনের মতো করপোরেট হাউজগুলোকে খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করতে এগিয়ে আসতেই হবে। কারণ, দেশের প্রতি তাদের দায়বন্ধতা রয়েছে। দায়িত্ব রয়েছে। সেটা তাদের পালন করা উচিত। কারণ কোনো দেশের সরকারই সবকিছু একা করতে পারে না। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট হাইজগুলোকে এগিয়ে আসতে হয়।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে যাইনি। কারণ আমরা অনূর্ধ্ব-১৬ দল সাফে পাঠিয়েছি। এই দলে মাত্র ৩-৪ জন সিনিয়র খেলোয়াড় ছিল। তারপরও তারা অসাধারণ খেলে রানার্স-আপ হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ২০২০ সালের সাফে আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। কারণ, সে সময় এই দলের ফুটবলারদের বয়স হবে ১৯। আর সিনিয়র খেলোয়াড়দের বয়স হবে ২৩-২৪। দারুণ ভারসম্যপূর্ণ একটি দল হবে তখন। আশা করছি সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল দারুণ কিছু করে দেখাবে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!