• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিষেকে যত চমক


ক্রীড়া ডেস্ক নভেম্বর ১৯, ২০১৬, ১২:৩০ পিএম
অভিষেকে যত চমক

টেস্ট খেলতে নেমে অভিষেকে চমক দেখানোর সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ নামটি উঠে আসলো গ্র্যান্ডহোম। তিনি নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বল হাতে চমকানো বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজের মতো নয়। মিরাজ স্পিনে তাক লাগিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সে। কিন্তু পেসার গ্র্যান্ডহোম বিস্ময় উপহার দিয়েছেন ৩০ বছর বয়সে। যখন অনেকেই ক্রিকেট খেলাই ছেড়ে দেন। মিরাজের সঙ্গে তার প্রার্থক্যটা আরেকটা জায়গায়। প্রতিপক্ষকে কম রান দেয়া।

মিরাজ ৮০ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে যেটি সেরা বোলিং। মিরাজ প্রসঙ্গ আসছে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের কারণেই। কিউই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিয়েছেন ৪১ রানে ৬ উইকেট, যেটি নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি।

মিরাজ-গ্র্যান্ডহোমের সূত্র ধরে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখে নিন অভিষেক টেস্টে বল হাতে প্রথম ইনিংসে নিজ দেশের হয়ে সেরা বোলিংয়ের তালিকাটি।
১৯৭২ সালের জুনে লর্ডস টেস্টে বব ম্যাসির তোপে ইংল্যান্ড অলআউট ২৭২ রানে। অস্ট্রেলীয় পেসার ৮৪ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। এর মধ্যে পাঁচটিই আবার বোল্ড ও এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে। দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাসি ছিলেন আরও ভয়ংকর, এবার ৫৩ রানে ৮ উইকেট। ইংলিশরা অলআউট ১১৬ রানে। অস্ট্রেলিয়া টেস্ট জেতে ৮ উইকেটে।

অভিষেক টেস্টে ১৬ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডে ম্যাসির পাশে আরেকজনই আছেন—নরেন্দ্র হিরওয়ানি। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাদ্রাজ টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬১ রানে ৮ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও সমান উইকেট পান ৭৫ রানে। অভিষেক টেস্টে উইকেট সংখ্যায় যেমন মিল, ম্যাসি-হিরওয়ানির আরও একটি জায়গায় মিল—দুজনই পরে হারিয়ে গেছেন। ম্যাসি খেলেছেন ৬ টেস্ট, হিরওয়ানি ১৭ টি।

আলফ্রেড ভ্যালেন্টাইন মর্ত্যলোক ছেড়ে চলে গেছেন এক যুগ আগে। স্বর্গে বসেও হয়তো তাঁর আফসোস হতে পারে অভিষেক টেস্টের কথা ভেবে। ১৯৫০ সালের জুনে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ওল্ডট্রাফোর্ড টেস্টে ক্যারিবীয় বাঁহাতি স্পিনার প্রথম ইনিংসে ১০৪ রানে পেয়েছিলেন ৮ উইকেট। ইংল্যান্ড অলআউট ৩১২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভ্যালেন্টাইন পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। দুর্দান্ত বোলিংয়ের পরও তাঁর দল হেরেছিল ২০২ রানে। নিজের রঙিন অভিষেকে দলের পারফরম্যান্স ধূসর—আক্ষেপ না হয়ে পারে!

কাইল অ্যাবটের অভিষেক-কীর্তিটা অবশ্য বেশি দিন আগের নয়। ২০১৩-এর ফেব্রুয়ারিতে সেঞ্চুরিয়ন টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৪০৯ রানে। প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়ের জবাবে পাকিস্তান গুঁড়িয়ে যায় অ্যাবোটের বোলিং-তোপে। প্রোটিয়া পেসার ২৯ রানে নেন ৭ উইকেট। পরের ইনিংসে ২ উইকেট পাওয়ায় অল্পের জন্য ১০ উইকেট পূর্ণ হয়নি। তবে ম্যাচসেরা অ্যাবটই।

ফেলে আসা ক্যারিয়ারের দিকে জন লেভার যখন তাকান, নিশ্চিত সেই দিল্লি টেস্টের উজ্জ্বল সব মুহূর্ত ফুটে ওঠে তাঁর স্মৃতিপটে। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বরে ফিরোজ শাহ কোটলা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশ বাঁহাতি পেসার। প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে ৭ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪ রানে পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। ম্যাচে ৭০ রানে ১০ উইকেট,২১ টেস্ট খেলা সাবেক এই ইংলিশ পেসারের যেটি ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কিছুদিন আম্পায়ারিং করেছেন মোহাম্মদ নাজির। খেলোয়াড় হিসেবেও তাঁর ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য নয়। তবে তাঁর অভিষেকটা হয়েছিল অসাধারণ। ১৯৬৯ সালের অক্টোবরে করাচি টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের সাবেক এই অফ স্পিনার ৯৯ রানে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট, যেটি তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং।

কোসালা কুরুপ্পুয়ারাচ্চি হয়তো হারিয়েই গেছেন স্মৃতির অতলে। তবে সাবেক এই বাঁহাতি পেসারকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট মনে রাখবে তাঁর অভিষেক টেস্টের কারণেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানে ৫, পরেরটিতে ৪১ রানে পেয়েছিলেন ২ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ও টেস্টে শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন কুরুপ্পুয়ারাচ্চি। তবে তাঁর ক্যারিয়ার থেমে গেছে ২ টেস্ট খেলেই। ক্যারিয়ারে যে ৮ উইকেট পেয়েছেন ৭টিই অভিষেকে।

অ্যান্ডি ব্লিগনটের অভিষেক রেকর্ডের সঙ্গে অবশ্য বাংলাদেশ জড়িয়ে। ১৯ টেস্ট খেলা সাবেক জিম্বাবুয়ের এই পেসার ২০০১ সালের বুলাওয়ে টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭৩ রানে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট, যেটি তাঁর ইনিংস সেরা বোলিং।

অভিষেক স্মরণীয় করে রাখা বেশির ভাগ বোলারের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল নয়। অধিকাংশই পথ হারিয়ে ফেলেছেন পরে। এই তালিকায় ব্যতিক্রম হয়ে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ মিরাজ-গ্র্যান্ডহোমের।

উল্লেখ্য, নিউজিল্যান্ডে অভিবাসী হওয়ার ছয় বছর পর ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেক কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের। সেই ম্যাচটা আবার তাকে খেলতে হলো জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ম্যাচে তাঁর একমাত্র অবদান উইকেটের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে মার্টিন গাপটিলকে জয়সূচক রান নিতে দেখা। দিন বিশেক পর ক্যারিয়ারের একমাত্র ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩৬ রান করার পর বোলিংয়ে ১ ওভারে দিলেন ৯ রান। 

সেই গ্র্যান্ডহোম কাল টেস্ট অভিষেকে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়লেন। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ভাঙলেন ৬৫ বছরের পুরোনো রেকর্ড। ১৯৫১ সালে এই ক্রাইস্টচার্চেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন লেগ স্পিনার অ্যালেক্স ময়ের।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!